বিদায় সব সময়ই বিরহের! কিন্তু প্রথম দুই ঘণ্টায় ঠিক বিরহ ছুঁয়ে যাচ্ছিল না। গান সঙ্গে চলা রঙিন নৃত্য ঠিক জানিয়ে দিচ্ছিল না-ভাঙছে মিলনমেলা! কিন্তু যখনই আকাশে উড়িয়ে দেয়া হলো কুটুম নামের মাসকট, বেলুনে ভর করে উড়ে গেল দোয়েল পাখি—তখনই যেন বিষাদের করুণ সুর ছুঁয়ে গেল ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। দু’সপ্তাহ শেষে এবার তবে ঘরে ফেরার পালা! নিভে ২৯ জানুয়ারি জ্বলে ওঠা গেমস মশাল! বিদায় ১১তম এসএ গেমস। বাংলাদেশের পাহাড়-সমতলের সংস্কৃতি সঙ্গে অ্যাকুয়াটিক, লেজার শো ও আতশবাজি—এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হলো দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় ক্রীড়া উত্সবের বাংলাদেশ পর্ব।প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা স্থায়ী সমাপনী অনুষ্ঠানে গতকাল তুলে আনা হয়েছে বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি।
অ্যাথলিটদের ফেয়ারওয়েল ল্যাপের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এসএ গেমসের সমাপনী অনুষ্ঠান। এখানে অবশ্য অংশগ্রহণকারী আট দেশের এক দেশ আফগানিস্তানের কোনো অ্যাথলিট ছিলেন না। সমাপনীর আগেই দেশে ফিরে গেছেন তারা। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের অ্যাথলিটদের ল্যাপ শেষে সেই পুরনো ধাঁচে শুরু হয় সমাপনী অনুষ্ঠান। ক্যারাভানে করে মাঠে আসেন তিন শিল্পী—এসআই টুটুল, কনকচাঁপা এবং রফিকুল আলম। গেয়ে ওঠেন বিদায়ী সঙ্গীত।
এরপরই বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জেনারেল আবদুল মুবিন গেমস মশাল তুলে দেন পরবর্তী এসএ গেমসের আয়োজক ভারতীয় অলিম্পিক কমিটির প্রধান সুরেশ কালমাদির হাতে। দু’বছর পর ভারতেরই কোনো শহরে বসবে এসএ গেমসের পরের আসর। এই আনুষ্ঠানিকতা শেষে শুরু হয় আনসার-ভিডিপি সদস্যদের পারফরমেন্স। এরপরই লন্ডনভিত্তিক বাংলা ব্যান্ড লক্ষীটেরার পারফরমেন্স। দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পাশ্চাত্যের বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণে তারা গেয়ে ওঠেন কিংবদন্তি শচীন দেব বর্মণের গান—‘নদী যদি হয়রে ভরাট কানায় কানায়..।’ অনেকটা নিজেদের মতো করেই বাংলাদেশের আরও কিছু জনপ্রিয় গান গেয়েছেন তারা। সঙ্গে চলেছে মডেলদের র্যাম্প!লক্ষীটেরা বিদায় নেয়ার পরই মাঠে নেমে আসে আদিবাসী পারফরমাররা। মণিপুরী নৃত্যের সঙ্গে তারা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন পাহাড় সমতলের মানুষদের জীবনসংগ্রামের চিত্র। যার সহিংস রূপটাও বাদ থাকেনি! পাহাড়ি সুরের সেই মাদকতা চলেছে অনেকক্ষণ।
এরই মধ্যে মাঠে আসেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। সবার জন্য শুভবার্তা জানান সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান—সৃষ্টি সুখের উল্লাসে দিয়ে শুরু হয় সুস্বাগত বাংলাদেশ নামের মিউজিক্যাল শো। এরপর বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের—আমরা সবাই রাজার সঙ্গে নেচে ওঠে ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পারফরমাররা।
দিজেন্দ্রলাল রায়ের গান—ধনে ধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরার সঙ্গে চলে মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে। যেখানে বাংলার প্রকৃতি ফুটিয়ে তুলেছেন পারফরমাররা। তাদের সেই পারফরমেন্স শেষে হতেই নিভে যায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের সব আলো! চমক যেন তখনও বাকি ছিল। শুরু হয় চোখ জুড়ানো অ্যাকুয়াটিক শো! যেখানে জলের খেলা ও শিবলি মুহাম্মদ এবং শামীম আরার নিপা’র সঙ্গে একঝাঁক নৃত্যশিল্পীর পারফরমেন্স অন্যরকম আবেদন তৈরি করে।
এরপর চলে লেজার শো এবং স্টেডিয়াম কাঁপানো আতশবাজির উত্সব! এভাবেই শেষ হয় বিগ বাজেটের সমাপনী অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী আর সমাপনীর পেছনে ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়, খরচ একটু বেশিই লাগল!শেষ হলো ১১তম এসএ গেমস। এটা ঠিক, বিদায়ের বিরহ এখন ছুঁয়ে যাচ্ছে সবাইকে। কিন্তু এই বিদায় মানে আবারও দেখা হওয়ার প্রতিশ্রুতি।
দুই বছর পর আবারও এমন করে দক্ষিণ এশিয়ার দেড়শ’ কোটিরও বেশি মানুষের সামনে হাজির হবে এই ক্রীড়া উত্সব! জন্ম নেবে নতুন করে হাসি-কান্নার গল্প।
No comments:
Post a Comment