Saturday, November 24, 2007

দিনযাপন


স্টপ ইট!-
দুই মিনিট এনটিভির খবর দেখার পরই মুখ ফসকে বলে ফেললাম। ইদানিং টেলিভিশনের সামনে বসতে ভাল লাগেনা। সিডরের তান্ডবে পড়া এইসব অসহায় মুখ গুলো দেখে বিষন্ন হয়ে উঠছি। এখানে একটা মানুষও খুঁজে পাইনা যারা একটু স্বচ্ছল। একেবারে দিন আনে দিন খায় মানুষরাই আরো একবার পড়েছে প্রকৃতির এই রোষানালে। এইসব অভাবী মানুষদেরই কেন এভাবে সংগ্রাম করে যেতে হবে সারা জীবন? এতটুকু সুখও কী তাদের তাদের জীবনে?
শুনেছি চার হাজারের মতো মানুষ এরইমধ্যে মারা গেছেন। রেড ক্রিসেন্ট তো বলছে আরো বেশি। সম্পদের ক্ষতি তো হাজার কোটি ছাড়িয়ে গেছে অনেক আগেই। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে থাকা সুন্দরবন একেবারে তছনছ হয়ে গেছে। এই ধাক্কা সামলে উঠতে নাকি আরো ২০ বছর লাগবে।
এসব তো ভবিষ্যতের ব্যাপার। এখন দুর্বিসহ দিন কাটাচ্ছে দক্ষিন পশ্চিম অঞ্চলে অভাবী মানুষরা। আবার শুন্য থেকেই শুরু করতে হচ্ছে তাদের। আগের যে কোন বিপর্যয়ের চেয়ে এবারের তীব্রতা বেশি হলেও পুনর্বাসনে তেমন সাড়া মিলছে কোথায়? দেশের এই পরিস্থিতি আওয়ামী লীগ আর বিএনপির মতো বড় দলগুলো বসে আছে। ফকরুদ্দিন সরকারকে জরুরী অবস্থা তুলে নেয়ার কথা বলছে তারা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
আজ বিবিসি রেডিও তে শুনছিলাম- এক মহিলা বলছিলেন কিভাবে লড়াই করে বেঁচে আছেন তারা। এটাকে বেঁচে থাকা বলাটা কি ঠিক হচ্ছে? মনে হয় না
যে পানিতে মরে পচে আছে মানুষ কিংবা গরু সেখানকার পানি খেতে হচ্ছে সবার! তাও তো পানি মিলছে, খাবার তো নেই কোথাও। ত্রানের জন্য লম্বা লাইনে দাড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। আসলে শরীরে শক্তি থাকলে তো উঠে দাড়াবেন তারা। কিভাবে যে আবার উঠে দাড়াবেন বরগুনা, পিরোজপুর আর পটুয়াখালীর ওইসব অভাগা মানুষ? কিছুই ভাবতে পারছি না।
ইদানিং আরো বেশি নিরাশাবাদী হয়ে উঠছি আমি...

Saturday, November 17, 2007

সিডর


আগের দিনই জেনেছিলাম সিডর মানে চোখ! শ্রীলংকান শব্দ। চোখের মতো দেখতে, তাই আবহাওয়াবিদরা এমন নাম দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা সাইক্লোনটি নিয়ে একটুও আগ্রহ ছিলনা আমার। দিন দিন এতোটাই নির্বিকার হয়ে যাচ্ছি যে এসব নিয়ে ভাবার সময়ও যেন নেই।

কিন্তু ভাবতে হলো ঠিকই। সিডর নামের সাইক্লোনটি ঠিকই ভাবিয়ে ছাড়লো আমাকে। আগের দিন মানে ১৫ নভেম্বর রাতে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথেই টের পেয়ে গেলাম ঝড় তছনছ করে দেবে হয়তো অনেক কিছুই। প্রচন্ড বৃষ্টি আর তীব্র বাতাসের মধ্যে পৌছলাম বাসায়, দৌড়ে গলির মুখ থেকে আমাদের বিল্ডিংয়ে যেতেই কাকভেজা অবস্থা! সমস্যার শুরু যেন সেখানেই। ইলেকট্রিসিটি না থাকায় মোম জ্বালিয়েই খেতে হলো রাতের খাবার। ভাবছিলাম সকালেই হয়তো ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু। কিন্তু আমাদের বন্ধ করে রাখা জানালার ওপাস থেকেই শোনলাম শো শো বাতাসের শব্দ। গতিবেগ আর কতো হবে ঘন্টায় ১০০ মাইল। শুনেছি বরগুনায় এর দ্বিগুন বেগে বাতাস বইছে এখন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বুঝে গেলাম অনেক কিছু উলোটপালট হয়ে গেছে। পত্রিকার পাতায় লাল রঙা ব্যানারে লেখা 'মহাবিপর্যয়' বুঝিয়ে দিচ্ছিল অনেক কিছু। বিদুৎ আসেনি তখনও। ওইদিকে রিজার্ভে রাখা পানিও শেষ! এভাবেই ভাবলাম অফিসে চলে যাই, সেখানে হয়তো ঝামেলা নেই।
কিন্তু কিসের কী! পুরো বাংলাদেশই তো উলোট পালট হয়ে গেছে। আবহাওয়াবিদদের অনুমান ভিন্ন করে দিয়ে ঢাকায়ও ঝড় হয়েছে, প্রচন্ড। শুধু ঢাকা নয়, সিডরের তীব্রতা তছনছ করে দিয়ে পুরো বাংলাদেশ। গ্রিড বিপর্যয়ের খবরটা শুনেই বুঝলাম বিদুৎ আসতে দেরি হবে। অফিসে বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। টায় কাজ শুরু করে দেয়ার কথা থাকলেও এদিন কাজ ধরলাম .৩০ মিনিটে। বিদুৎ আসেনি। জেনারেটরের আলোতেই চলেছে কাজ। সিদান্ত হয়েছে ১৬ থেকে কমে পত্রিকার পৃষ্টা হবে ৮।

ওইদিকে সাইক্লোনের ক্ষতি সম্পর্কেও কিছু জানা যাচ্ছিল না। টেলি যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন! ফ্যাক্স লাইন অফ। তারপরও খবর সংগ্রহ করতে হবে। কমিটমেন্ট বলে কথা। আর খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা গেলো উপকুলে কান্নার রোল! পটুয়াখালী ,বরগুনা, ঝালকাঠি আর খুলনায় ব্যাপকভাবেই চলেছে ঘুর্নিঝড়ের তান্ডবলীলা। নিহতের সংখ্যা দুই হাজারের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে।
যদিও সরকারী হিসেব মতে নিহত মাত্র ২৩৩ জন! হাস্যকরই বটে!
রাতে কাজ শেষে বাসায় ফিরতে গিয়েও বুঝলাম এর ধকল বাংলাদেশকে বইতে হবে অনেক দিন। কেননা, এটিকে বলা হচ্ছে যাবত কালের সবচেয়ে বড় সাইক্লোন।

বিদুৎ নেই, তাই অফিসের গাড়িতে গ্যাস ভরা সম্ভব হয়নি। রাস্তায় গিয়ে দেখলাম একেবারে ফাকা। শুক্রবার শীত ঝেকে বসেছে বলে নয়, ঘুর্নিঝড় আতংক ছড়িয়েছে, তাই বাসার বাইরে আসেননি অনেকে। অন্ধকার ঢাকা দেখতে দেখতে মধ্যরাতে বাসায় ফিরে দেখলাম সেই অন্ধকার পানিও নেই!
তারপরও তো মাথা মাথা গোজার ব্যবস্থা আছে।

কে জানে উপকুলের সেই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলো এখন কেমন আছে? তাদের তো সেই সুযোগও নেই। বাড়ি তছনছ হয়ে গেছে। অনেকের পরিবারের মানুষ মারা গেছেন। নিখোজ হয়েছেন কেউ! আগামী মাসেই ঘরে উঠতো যে ফসল, সেই ধানক্ষেত শেষ! কিছুই নেই তাদের।

নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে!

সঞ্জীব দ্যা

হাত কাপছে, লিখতে পারছি না! খবরটা শোনার পর থেকেই মন বিষন্ন হয়ে আছে। আমাদের সবার প্রিয় সঞ্জীব চৌধুরী মৃতু‌‌্র সঙ্গে লড়ছেন এখন। বাপ্পা মজুমদারের সাথে একটু আগে কথা বলে জানলাম- ব্রেন হ্যামারেজ হয়েছে আমাদের সবার প্রিয় সঞ্জীব দ্যার। ্পোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন দলছুটের এই শিল্পী। আমাদের কাছে অবশ্য সাংবাদিক হিসেবেই পরিচিত তিনি। ভোরের কাগজ এর সেই সব দিনের কথা মনে পড়ছে এখন। হাসি খুশি আড্ডা প্রিয় আমাদের সঞ্জীব দ্যা
আগের দিন রাতে নাকি প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছিল। বাসায় চিকিৎসা চলেছে। পরে অবস্থা অবনতির দিকে গেলে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
 
আপডেট:১৭ নভেম্বর দুপুর ২টা
তানভীর তারেক জানালো সঞ্জীব দ্যা আর নেই! বিডি নিউজেও দেখলাম একই খবর। সামহোয়ার ইন ব্লগেও দেখলাম এনিয়ে অমি রহমান পিয়ালের লেখা
কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না এই খবর। না, আমি হয়তো ভুলই শুনেছি

আপডেট: ১৭ নভেম্বর রাত ১০টা
না, মারা যাওয়ার খবরটি নিছকই গুজব। তিনি আছেন। এখনও অচেতনভাবে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন তিনি। চোখ মেলছেন না। ডাক্তারদের বেধে দেয়া ৭২ ঘন্টা সময়ের ২৪ ঘন্টা কেটে গেছে। আশাবাদী হওয়ার মতো কিছুই শোনাতে পারছেন না কেউ। সঞ্জীব দ্যার তিন বছর বয়সী মেয়ে কিংবদন্তীর জন্য মনটা হুহ করে উঠছে!

আপডেট: ১৮ নভেম্বর সকাল ১০টা
আজও লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে সঞ্জীব দ্যাকে। তিনি যে অবস্থাতে আছেন, সেখান থেকে একমাত্র মিরাকল হলেই নাকি ফেরা সম্ভব। তাই যেন হয়। আবার সেই সঞ্জীব চৌধুরীকে ফিরে পেতে চাই আমরা
আপডেট ১৮ নভেম্বর: রাত ৮টা

এক জন বলছিলেন কাল সকালেই নাকি শুনতে হবে না শুনতে চাওয়া সেই খবর। খুলে ফেলা হবে ওই ভেন্টিলেটর! এপোলো থেকে আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতালে ট্রান্সফার করার কথা ভাবা হচ্ছে ভাল লাগছে না কিছুই!

আপডেট ১৮ নভেম্বর: রাত ১১টা
স্যাটালাইট টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলায় সঞ্জীব চৌধুরীর জন্য সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে স্বপ্নবাজ এই মানুষটির পাশে এসে দাড়াতে পারেন আপনিও
বন্ধুরা টাকা পাঠাতে পারেন এই অ্কাউন্টে...
শুভাশীষ মজুমদার বাপ্পা
স্ট্যাণ্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
সঞ্চয়ী হিসাব নং:১৮-১৩৬০৪০৩০-০১

আপডেট: ১৯ নভেম্বর সকাল .৩০মি.
মোবাইল বন্ধ করে ঘুমিয়েছিলাম। না হলে রাতেই হয়তো খবরটা পেতাম। প্রিয় সঞ্জীব দ্যা আর নেই! সবার শুভকামনা আর প্রার্থনা ব্যর্থ করে দিয়ে এই মানুষটি কাল রাত ১২.১০ মিনিটে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। রাতে ডাক্তাররা খুলে নিয়েছেন লাইফসাপোর্ট সঙ্গে সঙ্গেই শেষ ৪৫ বছরের এক রঙীন জীবন...
.........................

দ্য সঞ্জীব চৌধুরী আনলিমিটেড

টোকন ঠাকুর

কিংবদন্তী একদিন বড় হয়ে যাবে কিংবদন্তী একদিন বুঝতে শিখবে, কিংবদন্তী কাকে বলে? কেন মানুষ কিংবদন্তী হয়ে যায়? কেন মানুষ মুখে মুখে ফেরা জনশ্রুতির তাৎপর্য গ্রহণ করে?... কফিন বাকশের দিকে তাকানো ভাবলেশহীন শিশু,শিশুটি কি জানে কফিনের মধ্যে যে ঘুমিয়ে আছে, সে কে? সে কেন বাসায় না-ফিরে বাকশের মধ্যে গিয়ে চুপচাপ শুয়ে আছে? শুয়ে থাকা মানুষটি বাবা, না সঞ্জীব চৌধুরী? সঞ্জীব চৌধুরী কে ছিলেন? কি ছিল তার অন্তরের কথা, স্বপ্নের কথা? কী ছিল তার দাহ? কেনো এতো অগ্নিময় জলের বুদবুদ হয়ে ফেটে যাওয়া? কোন ভূবনে ছিল তার স্বপ্নের পাখি?

কিংবদন্তী একদিন জানতে পারবে,এখানে অন্ধকার ছিল,পরম্পরার তার বাবা সেই অন্ধকারে জোনাকি হইয়ে গেছে সে একদিন বুঝতে পারবে, এখানে অনেক পাথর ছিল ,তার বাবা যৌবনের সমস্ত শক্তি ঢেলে পাথর সরাতে চেয়েছে, প্রেমতীব্র পথ তৈরী করতে চেয়েছে কিংবদন্তী একদিন শুনতে পারবে, বাতাসে রঙ্গীন সুর ছড়িয়ে আছে, কারন সঞ্জীব চৌধুরী গান গাইত ভয়াল নৈঃশব্দে শব্দ ছড়িয়ে সঞ্জীব চৌধুরী চলে গেছে শাদা শূন্যতায় মধুবনের রঙ ছড়িয়ে গেছে, আলাপের মধ্যে কবিতা পুঁতে রেখে গেছে এখানে অনেক বিচ্ছিন্নতা ছড়ানো বলে, তার বাবা অনেক গল্প রেখে গেছে

রাত্রি গভীর হলেও, যে- রাতে কিংবদন্তীর ঘুম আসবেনা, যখন সে খুলে খুলে দেখবে এলবাম-ভর্তি এক মুখ, হাওড়-প্রদেশের সেই মুখই... সঞ্জীব চৌধুরীর মুখ, কিংবদন্তী নিশ্চয়ই টের পাবে,বহুদিন আগে তার বাবাই কিংবদন্তী হয়ে গেছে এমনকি তার জন্মের আগেই কিংবদন্তী হয়ে যায় মিছিলের ,কবিতার, গানের দলছুট সঞ্জীব চৌধুরী এই ঠাঠা- মরার দেশে সঞ্জীব চৌধুরী বড় বেশি অপরাধী, কারন তার ভালোবাসার ক্ষমতা ছিল কারন, সে ভালোবাসত কারন এই পোশাকি সিস্টেমের দেশে সঞ্জীব চৌধুরী আপন অস্তিত্বের স্বাধীনতা ঘোষনা করেছে এই ফাঁকা-ফাঁকা মন্দির-মসজিদ-গির্জার দেশে , সঞ্জীব চৌধুরী ছিন্নমুল মানুষের বাসস্থানের ভাবনা মাথায় রেখেছে নিরন্নের, অন্ন পানীয়ের অধিকারের কথা বলার জন্য, সাহসে, বুক টানটান করে রাজপথে দাঁড়িয়ে থেকেছে কিংবদন্তী একদিন জানবে, মেডিকেল কলেজের গবেষনায় তার বাবার শরীর কাজে লেগেছিল এখানে রয়ে গেছে সঞ্জীব চৌধুরীর কংকাল... হয়তো আগন্তুকের সঙ্গে আড্ডা দিতে চায়ও, নতুন একটি কবিতা নিয়ে, গান নিয়ে মেতে উঠতে চায় মা বকা দিলে, হয়তো একদিন খুব মনখারাপ হলে আমাদের কিংবদন্তী কাউকে না বলে একা একাই চলে যাবে
মেডিকেল কলেজের দিকে সে কি বাবার কংকালের সঙ্গে কথা বলবে-
'বাবা আমার মন ভালো নেই, তুমি একটা গান গাও তো '

আমরা কিংবদন্তীর পেছনে পেছনে যাব এবং লক্ষ রাখব, দেখব, বাবার কংকাল মেয়ের আবদার রাখে কিনা? কংকাল কি কথা রাখবে, যখন সঞ্জীব চৌধুরীর কংকাল?

আমরা জানি সঞ্জীব চৌধুরী কিংবদন্তী ছিলেন...

...................................
@ কিংবদন্তী মেয়েটির বয়স , সঞ্জীব দা' সন্তান। আর ক্ঙ্কালটা এখনো ঢাকা মেডিকেলে সংরক্ষিত...