Saturday, November 17, 2007

সিডর


আগের দিনই জেনেছিলাম সিডর মানে চোখ! শ্রীলংকান শব্দ। চোখের মতো দেখতে, তাই আবহাওয়াবিদরা এমন নাম দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসা সাইক্লোনটি নিয়ে একটুও আগ্রহ ছিলনা আমার। দিন দিন এতোটাই নির্বিকার হয়ে যাচ্ছি যে এসব নিয়ে ভাবার সময়ও যেন নেই।

কিন্তু ভাবতে হলো ঠিকই। সিডর নামের সাইক্লোনটি ঠিকই ভাবিয়ে ছাড়লো আমাকে। আগের দিন মানে ১৫ নভেম্বর রাতে অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথেই টের পেয়ে গেলাম ঝড় তছনছ করে দেবে হয়তো অনেক কিছুই। প্রচন্ড বৃষ্টি আর তীব্র বাতাসের মধ্যে পৌছলাম বাসায়, দৌড়ে গলির মুখ থেকে আমাদের বিল্ডিংয়ে যেতেই কাকভেজা অবস্থা! সমস্যার শুরু যেন সেখানেই। ইলেকট্রিসিটি না থাকায় মোম জ্বালিয়েই খেতে হলো রাতের খাবার। ভাবছিলাম সকালেই হয়তো ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু। কিন্তু আমাদের বন্ধ করে রাখা জানালার ওপাস থেকেই শোনলাম শো শো বাতাসের শব্দ। গতিবেগ আর কতো হবে ঘন্টায় ১০০ মাইল। শুনেছি বরগুনায় এর দ্বিগুন বেগে বাতাস বইছে এখন।

সকালে ঘুম থেকে উঠে বুঝে গেলাম অনেক কিছু উলোটপালট হয়ে গেছে। পত্রিকার পাতায় লাল রঙা ব্যানারে লেখা 'মহাবিপর্যয়' বুঝিয়ে দিচ্ছিল অনেক কিছু। বিদুৎ আসেনি তখনও। ওইদিকে রিজার্ভে রাখা পানিও শেষ! এভাবেই ভাবলাম অফিসে চলে যাই, সেখানে হয়তো ঝামেলা নেই।
কিন্তু কিসের কী! পুরো বাংলাদেশই তো উলোট পালট হয়ে গেছে। আবহাওয়াবিদদের অনুমান ভিন্ন করে দিয়ে ঢাকায়ও ঝড় হয়েছে, প্রচন্ড। শুধু ঢাকা নয়, সিডরের তীব্রতা তছনছ করে দিয়ে পুরো বাংলাদেশ। গ্রিড বিপর্যয়ের খবরটা শুনেই বুঝলাম বিদুৎ আসতে দেরি হবে। অফিসে বসে বসে অপেক্ষা করতে থাকলাম। টায় কাজ শুরু করে দেয়ার কথা থাকলেও এদিন কাজ ধরলাম .৩০ মিনিটে। বিদুৎ আসেনি। জেনারেটরের আলোতেই চলেছে কাজ। সিদান্ত হয়েছে ১৬ থেকে কমে পত্রিকার পৃষ্টা হবে ৮।

ওইদিকে সাইক্লোনের ক্ষতি সম্পর্কেও কিছু জানা যাচ্ছিল না। টেলি যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন! ফ্যাক্স লাইন অফ। তারপরও খবর সংগ্রহ করতে হবে। কমিটমেন্ট বলে কথা। আর খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে জানা গেলো উপকুলে কান্নার রোল! পটুয়াখালী ,বরগুনা, ঝালকাঠি আর খুলনায় ব্যাপকভাবেই চলেছে ঘুর্নিঝড়ের তান্ডবলীলা। নিহতের সংখ্যা দুই হাজারের চেয়েও বেশি মনে হচ্ছে।
যদিও সরকারী হিসেব মতে নিহত মাত্র ২৩৩ জন! হাস্যকরই বটে!
রাতে কাজ শেষে বাসায় ফিরতে গিয়েও বুঝলাম এর ধকল বাংলাদেশকে বইতে হবে অনেক দিন। কেননা, এটিকে বলা হচ্ছে যাবত কালের সবচেয়ে বড় সাইক্লোন।

বিদুৎ নেই, তাই অফিসের গাড়িতে গ্যাস ভরা সম্ভব হয়নি। রাস্তায় গিয়ে দেখলাম একেবারে ফাকা। শুক্রবার শীত ঝেকে বসেছে বলে নয়, ঘুর্নিঝড় আতংক ছড়িয়েছে, তাই বাসার বাইরে আসেননি অনেকে। অন্ধকার ঢাকা দেখতে দেখতে মধ্যরাতে বাসায় ফিরে দেখলাম সেই অন্ধকার পানিও নেই!
তারপরও তো মাথা মাথা গোজার ব্যবস্থা আছে।

কে জানে উপকুলের সেই ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলো এখন কেমন আছে? তাদের তো সেই সুযোগও নেই। বাড়ি তছনছ হয়ে গেছে। অনেকের পরিবারের মানুষ মারা গেছেন। নিখোজ হয়েছেন কেউ! আগামী মাসেই ঘরে উঠতো যে ফসল, সেই ধানক্ষেত শেষ! কিছুই নেই তাদের।

নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে!

No comments: