Wednesday, January 6, 2016

খুব মনে পড়ছে ইব্রাহিম ভাইকে

এক টুকরো আলো এসে পড়লো ইব্রাহিম ভাইয়ের মুখে। মুখে এক চিলতে হাসি! তার ঠিক ওপরে যে চোখ দুটো জ্বলমল করছে, তার একটির আলো নেই! সেই কবে ছোটবেলায় কিছু বুঝে উঠার আগেই কী থেকে যে কী হয়ে গেল! থাক সেই ভুলে যেতে চাওয়া গল্প.. আজ বরং অন্য কিছু হোক..

টুয়েন্টিফোরের ঠিক সামনের রাস্তায় একপাশে ছোট্ট ছোট্ট দোকান। দু'পাশে দুইটা টুল, কেউ আবার চেয়ার সাজিয়ে রেখেছে। তাতেই সিগারেট, চা কিংবা বিস্কিট সঙ্গে আড্ডা। আড্ডাবাজিটা থাকলেও চায়ের দোকানে ঘন্টার পর বসে থাকার অভ্যাসটা কখনো ছিলো না! ছিলো না মানে আগে কখনো করিনি।

হয়নি, হবে না, করিনি, করবো না- এইসব গ্যারান্টির মৃুত্যু হলে আমরা কতো কী যে করি! একদিন ডিসেম্বরের শুরুতে সেই টুলের ধুলো মুছে আমিও বসতে শুরু করি।

চায়ের সঙ্গে আড্ডায় সংগতভাবেই একঘেয়ে সেই একটি প্রাসঙ্গিক প্রসঙ্গই থাকতো তখন। তখন প্রতিবাদী কথাগুলোই বরং ভাল লাগত। এরই ফাঁকে আড্ডা যখন আরো একঘেয়ে হয়ে উঠতো, ধুলো আর সিগারেটের ধোয়া মাখামাখি করতো, আমি তখন চলে যেতাম সেই ঢুল-চেয়ার পেড়িয়ে ছোট্ট দোকানটার ভেতরে। সেখানটায় ভীড় নেই। তখনই একটু একটু করে জানা ইব্রাহিম ভাইকে।

আশ্চর্য্য হয়েই তখন লক্ষ্য করতাম আমার কিংবা প্রতীকের জন্য কতোটা উদিগ্ন তিনি। প্রতিদিন দেখা হলেই বিনয়ের সঙ্গে সেই খোঁজটাই নিতেন। আক্ষেপ ঝরে পড়তো উনার চোখে-মুখে। কিছুদিন যেতেই আরো অবাক হতে থাকলাম-চা, বিস্কিট যাই খাই, টাকা নিতে চাই তো না! রীতিমতো জোর করে প্রতিবার টাকা দিতে হতো তাকে। কোন দোকানির সঙ্গে এমনটা কী যায়!

দিনের পর দিন এমনটা চলতে থাকল! আমরা মুগ্ধতা নিয়ে দেখলাম, সর্বনাশা দিনেও কিছু মানুষ পাশে থাকে আমাদের, সাহস জুগিয়ে যায়। তারাও একটু একটু করে আপন হয়ে উঠে। আবার কিছু মানুষ বন্ধুত্বা হারায়ও, সম্ভবত...

আজ ইব্রাহিম ভাইকে খুব মনে পড়ছে!