Monday, May 18, 2015

খানিকটা ভাল থাকার প্রলোভনে..

একটা সময় আমার কোন বিকেল ছিল না। পশ্চিমে কখন সুর্যটা মিলিয়ে গেল, কাঁচে ঘেরা এলইডি আলোর ঘরে বসে বুঝতামই না। বুঝতামই না, কখন আরো একটা বিকেল একেবারে হারিয়ে গেল! সবাই যখন বাইরে বেরুচ্ছে আমি তখন ঘোর লাগানো গোধুলী বেলা বন্ধক রেখে ছুটতাম। ছুটতাম খানিকটা ভাল থাকার প্রলোভনে...

পার্কের রেলিংয়ে কিংবা সবুজ ঘাসে পা ছড়িয়ে গল্প করতে থাকা মানুষগুলোকে দেখে ইর্ষা হতো তখন। অফিস শেষে বাদাম চিবোতে চিবোতে কথার খই ফুটিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার প্যান্ট আর শার্টে লেগে যাওয়া বাদামের খোসা পরিস্কার করতে করতে উঠে যাচ্ছেন.. নিশ্চয়ই অন্য কোথাও যাওয়ার তাড়া আছে! কেউ একজন হয়তো প্রতীক্ষায় আছে.. স্ত্রী, সন্তান কিংবা প্রেমিকা!

ইর্ষা হতো শেষ বিকেলে চায়ের দোকানের সামনে জটলায় দাড়ানো যুবকটিকে দেখেও। কোন তাড়া নেই, সিগারেটের ধুয়ায় পাক তুলে ছন্নছাড়া গল্প এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি, শাহবাগ, মেসি-রোনালদো, সাকিব-তামিম; এমন কী বাদ থাকছে না আস্তিক-নাস্তিক তর্কটাও! 


ঘরে ফেরার কথা মনেও নেই যেন তাদের।
বিকেল দেখা হয়না বলে আক্ষেপের শেষ ছিল না আমার। ভাবতাম এ কেমন জীবন? এ কেমন বেঁচে থাকা? শহরে আগুন্তক মনে হতো নিজেকে! 


এমন হিসেব মেলাতে মেলাতে কখন যে আমিই সেই ‘সৌভাগ্যবান’ হয়ে উঠলাম টেরই পাই নি। এক রাস্তা বন্ধ মানেই হল জীবন আরেকটা নতুন পথে নিয়ে যাচ্ছে...


অনেকে যখন ভুলেই গেছে শেষ বেলায় কেমন আলো ছড়িয়ে ডুবতে থাকে সুর্যটা, আমি তখন সবুজ ঘাসে পা ছড়িয়ে বসে আছি। কিংবা আমিই সেই চায়ের দোকানের ব্যস্ত আড্ডাবাজ যুবকটি, যার ঘরে ফেরার তাড়া নেই। তাড়া নেই দু’মুঠো স্বচ্ছলতার জন্য হন্যে হয়ে উঠার। আমি বরং জীবনের এই প্রান্তটাও দেখে নেই এবার। প্রানভরে দেখে নেই সবকিছু, যা কিছু দেখা হয়নি এক জীবনে...

এই বেশ ভাল আছি; কোন তাড়া নেই, নেই কোন অভিযোগ!