Tuesday, February 9, 2010

যদি বোল্টের মতো ঝড় তুলতে পারতাম!

যেন আগে থেকেই তার চিত্রনাট্য জানা ছিল! জানতেন ১০০ মিটারের ওই স্প্রিন্ট সবার আগে তিনিই শেষ করবেন! তাইতো দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানব হয়েও মাটিতেই পা ছিল শেহান শেরওয়ান আবেপিতিয়ার। ভারতের কুরেশমিদ আবদুল নাজিবকে পেছনে ফেলে গেমসের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পদকটি জেতার পর এই শ্রীলঙ্কান বলছিলেন, ‘আহ! যা চেয়েছিলাম তাই হলো! ট্র্যাকে পা দিয়েই নিজেকে নিজে বলেছিলাম—স্বর্ণ পদক চাই!’ শেহানকে এতোটা উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে না গেলেও বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের ভিআইপি বক্স থেকে নেমে এলেন দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী গামিনি লোকোগে। জড়িয়ে ধরলেন শ্রীলঙ্কার গর্ব দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্রুততম মানবকে। ততক্ষণে যেন শেহান বুঝতে পারলেন ১০.৪৬ সেকেন্ডে কী করেছেন তিনি!
এবারের এসএ গেমসের ২০০ মিটার স্প্রিন্টেই অবশ্য নিজেকে চিনিয়েছিলেন কলম্বোর ২০ বছর বয়সী এই তরুণ। ওই ইভেন্টে একটুর জন্য হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল স্বর্ণপদক। যার কাছে হেরেছিলেন সেই ভারতের আবদুল নাজিবকে (১০.৫৬ সেকেন্ড) গতকাল বুঝিয়ে দিলেন ওটা আসলে ছিল নিছকই অঘটন।
যদিও তার প্রিয় ইভেন্ট কিন্তু ১০০ মিটার সিপ্রন্টই। এই গ্রহের দ্রুততম মানব উসাইন বোল্টকে আদর্শ মানেন বলেই নাম লেখান ২০০ মিটার স্প্রিন্টে। জ্যামাইকান ওই গ্রেটের মতো ডাবল জেতার স্বপ্ন তাকে বিভোর করে রাখে সব সময়—‘মিথ্যে বলব না, উসাইন বোল্টকে অনুসরণ করি বলেই ১০০ মিটারের পাশাপাশি ২০০ মিটারেও নাম লেখাই। কিন্তু আমার মন পড়ে থাকে দ্রুততম মানবের লড়াইয়ে। যখনই ওর ৯.৫৮ সেকেন্ডে করা বিশ্বরেকর্ড দেখি, অবাক হয়ে যাই! যদি এভাবে গতির ঝড় তুলতে পারতাম।’
দক্ষিণ এশিয়ার দ্রুততম মানবের সঙ্গে অবশ্য এখনও কথা হয়নি উসাইন বোল্টের। তবে গত বছর জার্মানিতে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে দূর থেকে দেখেছেন স্বপ্নের তারকাকে। তার সেই রেকর্ড ছোঁয়ার স্বপ্ন কী দেখেন? প্রশ্নটার জবাব দিতে গিয়ে কিছুটা সময় নিলেন শেহান। একটু দম নিয়ে বললেন, ‘তাকে টপকে যাওয়া কি সম্ভব? মনে হয় না। বোল্ট সর্বকালের সেরা। আপনারা হয়তো হাসবেন, কিন্তু আমি মাঝে মধ্যে ঠিকই স্বপ্ন দেখি ওকে টপকে যাচ্ছি। আসলে স্বপ্ন দেখতে সমস্যা কোথায়? আমি মাত্র এ লেভেল পরীক্ষা দিয়েছি। আমার হাতে তো অনেক সময় আছে!’
জ্যামাইকান ওই কিংবদন্তিকে টপকে যেতে পারবেন কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে শ্রীলঙ্কান অ্যাথলেটিক্স যে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে সেটা আরও একবার প্রমাণ হলো। প্রমাণ হলো ২ কোটি জনসংখ্যার দেশটি একশ’ কোটিরও বেশি মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করা ভারতকে পেছনে ফেলছে! এমন সাফল্যের রহস্যটা কি? ‘দেখুন শ্রীলঙ্কার চার দিকই সমুদ্র দিয়ে ঘেরা। সমুদ্রের আশপাশে বেড়ে ওঠা মানুষগুলো এমনিতেই অ্যাথলিট। কিছু সামুদ্রিক মাছ আমাদের বাড়তি স্ট্যামিনা এনে দেয়। আমাদের মাসলগুলো মজবুত হয়ে ওঠে আরও’—বলছিলেন এবারের গেমসের দ্রুততম মানব শেহান শেরওয়ান আবেপিতা।
১০০ মিটার স্প্রিন্টে ব্রোঞ্জ জিতেছেন কাল পাকিস্তানের লিয়াকত আলী। সময় নিয়েছেন ১০.৫৬ সেকেন্ড। নিশ্চয়ই এবার জানতে চাইছেন বাংলাদেশের প্রতিযোগী কী করল?প্রশ্নটা এড়িয়ে যেতে পারলেই ভালো হতো। কেননা ৮ জনের মধ্যে অষ্টম হয়েছেন মাসুদুল করিম।

No comments: