Tuesday, February 9, 2010

বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে নিতে চাই, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চাই!

শিরোনাম দেখে নিশ্চয়ই চমকে উঠছেন! একবার নয়, বারকয়েক এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল কোচ জোরান জর্জেভিচকে। কিন্তু বাংলাদেশ কোচ নিজের কথায় অনড় থেকেছেন। জানিয়েছেন বাংলাদেশকে নিয়ে তার বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্নের কথা। সেই স্বপ্নের শেষ ধাপ বিশ্বকাপ জয়! এসএ গেমসে স্বর্ণজয়ী বাংলাদেশ দলকে কোচিং করানোর জন্য সাকুল্যে সময় পেয়েছিলেন জর্জেভিচ মাত্র ১৫ দিন। তাতেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ১১ বছর পর জেতে ফুটবলের এই স্বর্ণপদক। এই সাফল্য ও বাংলাদেশকে নিয়ে তার পরবর্তী পরিকল্পনা এবং স্বপ্নের মৌতাতে মেতেছিলেন কাল জর্জেভিচ। টেলিফোনে তার এই সাক্ষাত্কারটি নিয়েছেন ... আপন তারিক
আপনিই এখন ‘ম্যান অব দ্য মোমেন্ট’না, না..., আমি একা কোথায়?
সবাই মিলেই এই অর্জন। এখানে আলাদা করে কাউকে বলা ঠিক হবে না। দলের ফুটবলার আমিনুল, ওয়ালী, এনামুল, নাসির, মিশু, মামুন, সবুজসহ সহকারী কোচ, মেডিকেল স্টাফ, ম্যানেজার—সবার পরিশ্রমেই এসএ গেমসের স্বর্ণপদক ধরা দিয়েছে আমাদের হাতে।
ফাইনালে শেষ বাঁশি বাজার পর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গায়ে আপনার উচ্ছ্বাসটা বেশ চোখে পড়ল...
এমন জয়ের পর আসলে আবেগ ধরে রাখা কঠিন। ৪-০ গোলে জয়! সত্যিই ছেলেদের এমন সাফল্যে আমি গর্বিত। এমন একটা মুহূর্তের জন্যই তো অপেক্ষা করেছি। যখন সেই মুহূর্ত এলো, তখন আর উত্সব না করে উপায় আছে? স্মরণীয় এক রাত কাটালাম সোমবার!
আসলেন, দেখলেন এবং জয় করলেন! মাত্র সপ্তাহ দুয়েকের অনুশীলনেই এই সাফল্য...
এ প্রশ্নটা সোমবার রাত থেকেই শুনছি। আমি ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারব না কী আমার সাফল্যের রহস্য। তবে এটা বলতে পারি, আমি ফুটবল খেলাটিকে ভালোবাসি। ফুটবল আমার ধর্ম! ভালোবাসার জায়গায় আমি সব সময়ই সত্। সততা রেখে আমি আমার কাজগুলো করি বলেই সাফল্য এসে ধরা দেয় আমার হাতে। সবচেয়ে বড় কথা, এই খেলা থেকেই আয় করা অর্থে আমার পরিবারের মানুষরা বেঁচে আছে। এ কারণে যখনই যাদের সঙ্গে কাজ করি, নিজের সেরাটা দিতে চেষ্টা করি। কোনোরকম অসততা থাকে না আমার কাজে।
তাহলে আপনি বলছেন সাফল্যের এই অনুপ্রেরণাটা সবার আগে আপনার পরিবার থেকেই আসে?
অবশ্যই! এরপর যাদের হয়ে কাজ করছি, তাদের আবেগটাও আমার কাছে বড় হয়ে ওঠে। আসলে মানুষকে খুশি করার চেয়ে বড় কিছু আর হয় না। এখানকার মানুষগুলো খুব মিশুক। গেমস শুরু করার আগে আমি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি। তার কথাগুলোও আমাকে বেশ অনুপ্রাণিত করেছিল। এছাড়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনও সারাক্ষণ পাশে থেকেছেন আমার। বাদল রায়সহ অন্যরাও সাহায্য করেছেন সব সময়।
কিন্তু সোমবার আফগানদের হারিয়ে স্বর্ণপদক জেতার পর আপনি বলছিলেন যে, আপনি মুক্ত! বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন আপনার সঙ্গে ভবিষ্যত্ নিয়ে কথা বলছে না—এটা নিয়ে আক্ষেপ ছিল আপনার...
না, এসব নিয়ে এখন কথা বলতে চাই না (কিছুটা উত্তেজিত)। দেখুন, আপনাদের আরও দেশপ্রেমিক হতে হবে। এসব নেতিবাচক কথা বলবেন না!
এটা নেতিবাচক কথা হলো কোথায়? আগের দিন আপনি নিজেই তো এ নিয়ে হতাশ ছিলেন...
এ প্রসঙ্গে এখন আর আমার কিছু বলার নেই!
আপনার আগে বাংলাদেশের সর্বশেষ বিদেশি ফুটবল কোচ কীভাবে বিদায় নিয়েছিলেন, সে ঘটনা কি আপনার জানা আছে?
দেখুন, মনে হচ্ছে আপনি ঘটনা অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আমি এ নিয়ে কিছু বলব না!
ডিডো কিন্তু ফুটবল ফেডারেশনের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে বিদায় নিয়েছিলেন! ওই প্রসঙ্গ থাক; তাহলে এবার বলুন আপনার পরবর্তী লক্ষ্য কি?
আমার লক্ষ্য এখন শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠেয় চ্যালেঞ্জ কাপ। কলম্বোতে সামনের সপ্তায় শুরু হওয়া ওই টুর্নামেন্টেও এভাবে ভালো ফুটবল উপহার দিতে চাই।এটা তো গেল নিকট-ভবিষ্যতের কথা।
দীর্ঘমেয়াদের জন্য বাংলাদেশ দল পেলে কতদূর নিয়ে যেতে পারবেন?
দেখুন, আমার স্বপ্নটা অনেক বড়। বাংলাদেশকে বিশ্বকাপে নিয়ে যেতে চাই। সত্যি বলতে কি, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে চাই।
আপনি যা বলছেন, তা কি বুঝেশুনে বলছেন? বাংলাদেশের কি সেই সামর্থ্য আর ফুটবলার আছে?
অবশ্যই আছে। চার বছর দায়িত্ব পেলেই আমি সবকিছু পাল্টে দিতে পারব! এখানে প্রতিভার কমতি নেই, শুধু খুঁজে বের করতে হবে। সবার আগে দরকার পরিকল্পনা। তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিভা খুঁজে বের করতে হবে।
আপনার সেই উচ্চাবিলাষী স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দেবে। এমন কথা এর আগেও বাংলাদেশের অনেক বিদেশি কোচ শুনিয়েছেন। শুভ কামনা থাকল ১৬ তারিখ থেকে শুরু হওয়া চ্যালেঞ্জ কাপের জন্য। সেখানে বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে...
আসলেই এটা বড় চ্যালেঞ্জ! মিয়ানমার, তাজিকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলতে হবে। তবে আমার দৃষ্টি সামনের দিকেই থাকছে।

No comments: