Monday, February 1, 2010

নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়েই খুশি একরামুল

নিজের সীমাবদ্ধতাটুকু ভালো করেই জানেন একরামুল। তাইতো উডেন ফ্লোর জিমন্যাসিয়ামের আট-দশজন দর্শক কিংবা কর্মকর্তাদের মতো আক্ষেপে পোড়েননি তিনি। একটুর জন্য স্বর্ণ পদক হাতছাড়া হয়ে গেলেও হাসতে হাসতেই রৌপ্যজয়ী এই ভারোত্তোলক বললেন, ‘গত কলম্বো এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলাম, এবার রৌপ্য এলো! আমি খুশি। এভাবে এগিয়ে যেতে পারলেই হবে।’ নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেই খুশি একরামুল।
কিন্তু গতকাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ওই উডেন ফ্লোর জিমন্যাসিয়ামে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ার পাশাপাশি জাতীয় সঙ্গীতও বাজতে পারতো! একটুর জন্য সেটা হলো না! ৫৬ কেজি পুরুষ ভারোত্তোলনে গতকাল শুরুটা দুর্দান্ত হয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই তরুণের। স্ন্যাচ পর্বে এক পলকে তুলে নিয়েছিলেন ১০২ কেজি। উল্টোদিকে বাছাই পর্বেই বিদায় নেয় ভারতের ভারোত্তোলক। লড়াইয়ে বাংলাদেশের একরামুল হকের সঙ্গে টিকে থাকেন শ্রীলঙ্কার ওয়াতা আসে কামাল এবং পাকিস্তানের আবদুল্লাহ গফুর। কামাল তোলেন ৯৫ কেজি। আবার গফুর স্ন্যাচে উত্তোলন করেন ৯৭ কেজি। এখানে এগিয়ে যান বাংলাদেশের একরামুল।কিন্তু তখনও বাকি স্ন্যাচ ও ক্লিন রাউন্ড।
এখানে সেই এগিয়ে থাকাটা কাজে লাগানোর সুযোগ এসে যায় একরামুলের। প্রথম দফায় শুরুটাও বেশ ভালো হয় ২০ বছর বয়সী এই তরুণের। উত্তোলন করেন ১২৬ কেজি। পাকিস্তানের আবদুল্লাহ গফুর ১২৫ কেজিতে আটকে গেলে রৌপ্য পদক নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। তখন প্রতীক্ষা এবারের এসএ গেমসের প্রথম স্বর্ণের। সকালে ব্যাডমিন্টন থেকে এসেছিল এবারের গেমসে বাংলাদেশের প্রথম পদক ব্রোঞ্জ। মনে হচ্ছিল, বুঝি এদিনই স্বর্ণের মুখ দেখবে বাংলাদেশ। মুহূর্তেই এখবর ছড়িয়ে পড়ে স্টেডিয়াম পাড়ায়। উডেন ফ্লোর জিমন্যাসিয়ামে উত্সুক কর্মকর্তাদের ভিড় বাড়তে থাকতে।
কে জানতো তখনও সেরা চমকটা লুকিয়ে রেখেছেন ২৫ বছর বয়সী যুবক ওয়াতা আসে কামার? স্ন্যাচ এন্ড ক্লিন রাউন্ডে ১৩৫ কেজি তোলার পরিকল্পনা করেন। তার এই সিদ্ধান্তে চমকে ওঠে সবাই। কিন্তু সেই চমকের রেশ মিলিয়ে না যেতেই দু’দফায় তুলে মাথার ওপর তুলে ধরেন ১৩৫ কেজি ডাম্বেল। এমন ছোটখাটো গড়নের শ্রীলঙ্কান ভারোত্তোলকের মাসলে এতো শক্তি! এরপর সুযোগ এসে যায় সেটা টপকানোর। ২ কেজি বাড়িয়ে ১২৮ কেজি ওজনের ডাম্বেল তোলার চ্যালেঞ্জ নেন একরামুল। সেটা করতে পারলে টাই। পরে আবারো লড়াই!
একরামুল উডেন ফ্লোরে দাঁড়াতেই উত্সুক হয়ে ওঠেন সবাই। কি হয় এই শঙ্কা! কিন্তু বাড়তি ওই দুই কেজি ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না! তুলতে পারলেন না ১২৮ কেজি। আর তাতেই ভারোত্তোলন ৫৬ কেজি বিভাগে স্বর্ণ নিশ্চিত হয়ে যায় শ্রীলঙ্কার ওয়াতা আসে কামালের। তবে হতাশ হওয়ার সুযোগ ছিল না একরামুলের। গত এসএ গেমসে ব্রোঞ্জের পর এবার রৌপ্য—উন্নতি তো হচ্ছেই। তাইতো পদকে চুমু খেয়ে মেহেরপুরের এই তরুণ বলছিলেন, ‘এটা ঠিক, স্বর্ণ জিততে পারলে আরো ভালো লাগতো। আমি নার্ভাস ছিলাম না। তারপরও এটা হয়ে গেছে। কিন্তু দুঃখ নেই! দেখুন আমি এমন পরিবার থেকে উঠে এসেছি যেখানে মন খারাপকে প্রশ্রয় দেই না। আমার ভাই হামিদুল ইসলামও ভারোত্তোলক ছিলেন। ইসলামাবাদ গেমসে দেশকে ব্রোঞ্জ এনে দিয়েছেন আমার বড় ভাই। এবার আমি পেলাম রোপ্য।’ এখানেই থামলেন না ১৯৯০ সালের ১ জানুয়ারি জন্ম নেয়া এই ভারোত্তোলক। বলছিলেন, ‘গত এক বছর অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ মিলেছে। এখন এসএ গেমস শেষেও এই ধারাবাহিকতা থাকলে আমি এশিয়ান গেমসেও পদক এনে দিতে পারবো। আমার ওপর আস্থা রাখতে পারেন। আশা করছি কমকর্তারা গেমস শেষে আমাকে ভুলে যাবেন না!’
কর্মকর্তারা শুনছেন?

No comments: