পাকিস্তানের করাচির ২৩ বছর বয়সী নাসিম তাইতো ল্যাপ শেষ করেই ট্র্যাকে সেজদায় লুটিয়ে পড়লেন। সবার আগে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। কেননা, তিনি এমন এক পরিবেশ থেকে উঠে এসেছেন যেখানে মেয়েদের খেলাধুলায় আসা বিরল উদাহরণ। তারপরও এসেছেন! আর বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রতিভা আগুনের মতো, তা কখনো চাপা দিয়ে রাখা যায় না। তবে পাকিস্তান আর্মিতে চাকরি করা এই তরুণী কি সত্যিই ভেবেছিলেন ঢাকায় এতো বড় চমক অপেক্ষা করছে? ‘মিথ্যে বলব না, অন্যরা যাই ভাবুক আমি কিন্তু স্বর্ণপদক জেতার জন্যই ট্র্যাকে নেমেছিলাম।’ কিন্তু অন্য প্রতিযোগীদের পাশে গতকাল সাদামাটাই লাগছিল নাসিম হামিদকে। উচ্চতা মাত্র ৫ ফুট ২ ইঞ্চি।
কিন্তু সেই উচ্চতা কোনোরকম বাধাই হতে পারল না।তবে নাসিম হামিদ বলছিলেন তার এই ২৩ বছরের চলা পথটুকু এমন প্রশস্ত ছিল না। প্রতি মুহূর্তে লড়াই করে তবেই উঠে আসতে হয়েছে তাকে। এমনিতে পাকিস্তানে মেয়েদের খেলাধুলা বেশ পিছিয়ে। তালেবান উত্পাতের কারণে এখন আরও বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু জায়গা ছাড়া অনুশীলনের সুযোগ ছিল না নাসিম হামিদের। এসএ গেমসের দুই মাস আগে ইসলামাবাদ স্পোর্টস কমপ্লেক্সে অনুশীলন শুরু করেন। এর মধ্যে পাকিস্তান জাতীয় অ্যাথলেটিক্সের ১০০ মিটার স্প্রিন্টের স্বর্ণপদক জিতে নিজেকে চিনিয়ে দেন। তবে কোচ মাকসুদ আহমেদ শুরুতেই বুঝেছিলেন এই মেয়ে অনেকদূর যাবে, ‘আসলে ট্রেনিংয়ে ওকে দেখেই বুঝতে পারি ও হারিয়ে যাবে না।’নাসিম হামিদ যে হারিয়ে যাননি তার প্রমাণ তো গতকাল বিকালের ইতিহাস।
হ্যাঁ, এটা ইতিহাসই। এই প্রথম পাকিস্তানের কোনো মেয়ে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসের দ্রুততম মানবী হলেন! ব্যাপারটা আরও বেশি উচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে দিচ্ছে তাকে। বলছিলেন, ‘আমি পথ দেখালাম। এবার আশা করছি পাকিস্তান থেকে আরও অনেক মেয়ে উঠে আসবে। এসএ গেমসই শুধু নয়, কমনওয়েলথ গেমসেও বাজবে পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত।’
গতকাল নাসিম হামিদের পরই ছিলেন প্রমীলা প্রিয়দর্শিনী। তিনি সময় নিয়েছেন ১১.৯৩ সেকেন্ড। ব্রোঞ্জ একই দেশের আচালা ডিয়াসের (১২.১২)। পাকিস্তানি নাসিম হামিদের দিনে হতাশ করেছেন বাংলাদেশের সামসুন্নাহার চুমকি। ১২.১৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্রুততম মানবীর লড়াইয়ে পাঁচ নম্বর আমাদেরও দেশসেরা স্প্রিন্টার।
No comments:
Post a Comment