Monday, February 1, 2010

দলীয়করণ, লেজুড়বৃত্তি

এসএ গেমসের জন্য বাংলাদেশ কি এখন সত্যিই প্রস্তুত ছিল?’ গতকাল কোনোরকম ভনিতা না করে প্রশ্নটা করে ফেললেন নেপালের সাংবাদিক মনোজ গিমেরা। প্রশ্নটা সঙ্গত কারণেই করেছেন সাংবাদিকতা ক্যারিয়ারের পঞ্চম দক্ষিণ এশিয়ান গেমস কাভার করতে আসা কাঠমান্ডুর এই সাংবাদিক। ১১তম এসএ গেমস শুরু হয়েছে তিনদিন হয়ে গেছে। কিন্তু সবকিছুই যে এখানে এখনও অগোছালো!
গতকালও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ভবনে তৈরি মিডিয়া সেন্টারের সংস্কার কাজ চলছিল। দিনের বেশিরভাগ সময় ধরে চলা ড্রিল মেশিন নিয়ে ঠোকাঠুকির কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে অনেক সাংবাদিককে। এটা তো গেল মিডিয়া সেন্টারের ভেতরের সমস্যা। সেখান থেকে বেরিয়ে যে সাংবাদিকরা অন্য ভেন্যুতে যাবেন তার সুযোগ নেই। শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও সেটা গতকাল পর্যন্ত কথা হয়েই থেকেছে, বাস্তবতার ছোঁয়া মিলেনি! জুডোর লড়াই দেখতে তাই নিজ উদ্যোগেই সাভার যেতে হলো শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক মহিন্দা বিবেলকে। শ্রীলঙ্কান রেডিও লাখান্দার এই সাংবাদিক বলছিলেন, ‘আমি এর আগে কোনো গেমসেই এমনটা দেখিনি। দেশের বাইরে যখনই গেছি গেমস কাভার করতে সঠিক গাইডলাইন পেয়েছি আয়োজকদের কাছ থেকে। এখানে তেমনটা নেই। আমার তো মনে হয় ইসলামাবাদ ও কলম্বো গেমস এর চেয়ে ভালো ছিল। ওরা অনেক আন্তরিক ছিল। এখানে নিজের উদ্যোগেই ভেন্যুতে যেতে হচ্ছে।’
এখানেই শেষ নয়, ভেন্যুতে গিয়েও খুব একটা সহায়তা মিলছে না!গতকাল প্রশ্নগুলো উঠতেই আয়োজক বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, ‘দেখুন আমি একা কি করব? যখনই যেটা আমার কানে আসে আমি সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। এখন আপনার কাছে শুনলাম সাংবাদিকদের শাটল গাড়ি নেই, সেটাও সমাধান করব।’ আগামীকাল থেকে হবে— এই বলে প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেলেন মহাসচিব।
কিন্তু গতকাল সাংবাদিকদের হাতে আসা বিওএ’র তৈরি গেমস গাইড নিয়ে ঠিকই বিব্রত হলেন কুতুবউদ্দিন। ভুলেভরা ওই গাইড গতকাল তুলে দেয়া হয়েছে গেমস কাভার করা সাংবাদিক, প্রতিযোগী, কর্মকর্তা এবং লিয়াজোঁ অফিসারদের হাতে। তথ্যগত একাধিক ভুলে সয়লাব এই গাইড। যা তৈরি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি শাহরিয়ার আলম। তাইতো রাজনীতি থেকে দূরে থাকেনি এই সঙ্কলন। প্রথম পৃষ্ঠা উল্টাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। এই গেমসের সঙ্গে এই ছবির রহস্য কি কে জানে! এখানেই শেষ নয়, তুলে ধরা হয়েছে শেখ মুজিবের সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী। গেমস গাইডে বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে তুলে ধরেছেন হাজারো ভুল তথ্য। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বানানো হয়েছে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক। একইভাবে আমার দেশ ক্রীড়া সম্পাদক এম. এম. কায়সারকে দেখানো হয়েছে যে, তিনি কর্মরত জনকণ্ঠ পত্রিকায়। এমন ভুলেভরা গেমস গাইড হাতে নিয়ে বিব্রত বিওএ মহাসচিব কাল বলছিলেন, ‘আমি জানি না ওরা কেন এমন ভুল করল। মহাসচিব হিসেবে এমন ব্যর্থতা আমারই।’ এই বলে এই প্রতিবেদকের সামনেই গেমস গাইডের প্রকাশক শাহরিয়ার আলম এমপির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কুতুবউদ্দিন। কিন্তু টেলিফোনে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে মহাসচিব জানিয়েছেন ভুলগুলোর জন্য তারা লজ্জিত!
এভাবে অতি উত্সাহীদের এমন কাণ্ড অবশ্য এবারই প্রথম নয়। শোনা গিয়েছিল এসএ গেমসের প্রথম আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছিল। পরে কয়েকজনের আপত্তির মুখে তা বাতিল হয়। ছাপানো হয় নতুন ডিজাইনের আমন্ত্রণপত্র। আবার শেখ মুজিবের নামে গেমসের নামকরণের কথাও বলেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু গেমসের নিয়ম অনুযায়ী সেটা করা সম্ভব নয় বলে তা বাতিল হয়ে যায়।তারপরও দক্ষিণ এশিয়ার এই গেমসকে ‘দলীয় রাজনীতি’র বাইরে রাখতে পারছেন না অতি উত্সাহীরা! ১৭টি স্বর্ণপদকের টার্গেট নিয়ে এবারের গেমসে লড়ছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত কোনো স্বর্ণপদক জেতা হয়নি স্বাগতিকদের।
তবে ‘দলীয়করণ, লেজুড়বৃত্তি ও অব্যবস্থনার’— ‘হীরক পদক’(!) এখনই গলায় ঝুলিয়ে ফেলেছেন গেমসের ছোট—বড় কর্তারা!আখের গোছাতে হবে যে!

No comments: