Saturday, April 24, 2010

জীবন এতো ছোট কেন?


ঘুম ভাঙ্গলো শুনতে না চাওয়া খারাপ খবরটি শুনে। কায়সার ভাই জানালেন ''আপনাদের ভোরের কাগজ এর টিপু ভাই মারা গেছেন!'' দেশ টিভিতে নাকি তাই দেখাচ্ছে!
কথা শেষ না হতেই আমাদের টিপু ভাই, জহিরুল আহসান টিপু ভাইয়ের মুখটা কপ্পনা করছিলাম। খুব বেশি স্বাস্থ্য তো ছিল না। আবার বয়সও তো বেশি হয়নি। কি হয়েছিল? কেন এই হঠাৎ মৃত্যু?

কায়সার ভাই অবশ্য বিস্তারিত উত্তর দিতে পারলেন না। কথা হলো বন্ধু মুকুল শাহরিয়ারের সঙ্গে। জানালো ব্রেন হ্যামারেজ! দুমাস আগে স্ট্রোক হয়েছিল একবার। ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছিলেন জীবন বাঁচাতে হলে পত্রিকার এই টেনশয় ময় চাকুরি ছাড়তে হবে। কিন্তু নেশা নাম যখন জার্নালিজম, তখন তা আর কী ছাড়া যায়। পারেন নি টিপু ভাই। আবার যোগ দেন ভোরের কাগজে। গতকালও ঠিক ঠাক মতো অফিস করেছিলেন। বার্তা বিভাগের কাজ শেষ করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নাকি বাসায় ফিরেন। উনার মা অসুস্থবেশ কিছুদিন ধরে। বাসায় ফিরে মায়ের সঙ্গে দেখা করেন! কিন্তু এরপরই হঠাৎ অসুস্থহয়ে পড়লে তাকে নেয়া হয় হাসপাতালে। এরপর যা হওয়ার নয় তাই হলো। আর চোখ মেললেন না টিপু ভাই।
শুনেছি বয়স নাকি ৪৭ ছুয়েছিলেন কিছুদিন আগে। এটা কি চলে যাওয়ার সময়?
আমি যখন ভোরের কাগজ কাজ করতাম, তখনই টিপু ভাইয়ের সঙ্গে পরিচয়। তিনি অনেক আগে থেকেই এই পত্রিকাটির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আজকের কাগজ হয়ে আসেন এখানে। এরপর বেশ কয়েকবারই ভোরের কাগজ ছেড়ে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন পত্রিকায়। কিন্তু কি এক অদৃস্ট সুতোর টানে আবারো ফিরেছেন।
এবার আর ফেরার সুযোগ নেই।

বার্তা সম্পাদক টিপু ভাই প্রায়ই আমাদেরপাষন্ডবলে সম্বোধন করতেন। এটা অনেকটা আদরের ভঙ্গিতেই করতেন তিনি। কিন্তু কী অদ্ভুদ ব্যাপার, নিজেই পাষন্ডের মত স্ত্রী , দুই সন্তান আর পরিবার, বন্ধু সহকর্র্মীদের রেখে চলে গেলেন।
ভোরের কাগজে সকালে লাশ আনা হয়েছিল। আমি যেতে পারিনি। আসলে টিপু ভাইয়ের হাসি মুখটাই স্মৃতিতে ধরে রাখতে চেয়েছি আমি! কী লাভ কফিনে বন্ধী ওই জড় মানুষটাকে দেখে?

                                *************************

এই লেখা যখন লিখছি, তখন আরো একটা খারাপ খবর শুনলাম। খবর পেলাম, আমাদের মাসুদ ভাইয়ের বড় ভাইয়ের স্ত্রী আত্নহত্যা করেছেন। ট্রেনের নিচে নাকি আত্নাহুতি দিয়েছেন!
জানি না নিয়তির কোন খেলা। কেন এমন হয়? ভাবছি, আজ রাতে ঘুম হবে কি?

Monday, April 12, 2010

বসন্তের বিষন্ন বিকেল

পুবের হাওয়া মনে হচ্ছিল যেন আমাকে উড়িয়ে নেবে! সৃর্যের দাপট একেবারেই কমে গেছে। একটু পরই অন্ধকার হয়ে যাবে চেনা হয়ে উঠা আমার চারপাশ! ঘন্টা খানেক হলো এখানে এসে দাড়িয়েছি। খোলা একটা মাঠ! চোখ যতোদুর যাচ্ছে চোখে পড়ছে শুধুই সবুজ, কেমন যেন বিবর্ন মনে হচ্ছে শেষ বিকেলের আলোয়। জায়গাটার নাম ঠিক বলতে পারছি না! ঢাকার কোলাহল ছাড়িয়ে তাহলে অনেক দুর চলে এসেছি

কাউকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো জানা যাবে পুবের হাওয়া কোথায় উড়িয়ে এনেছে আমাকে! কিন্তু জায়গাটার নাম জানা খুব কী জরুরী! অবশেষে পালিয়ে যাওয়ার জন্য কিছুটা সময় বের করতে পেরেছি সেটাই মুহুর্তে আমার কাছে মহা গুরুত্বপুর্ন!

ক্লান্ত হয়ে উঠেছিলাম, চেনা ছক.. চেনা অফিস ..পরিচিত মুখ ..অফিসে যেতে যেতে সেই একইভাবে কল্পনার ফানুস উড়িয়ে চলা.. সত্যিই হাপিয়ে উঠেছিলাম। তাইতো কাউকে কিছু না বলে আজ বেরিয়ে পড়েছি! চোখ যেদিকে যায় চলে যাবো

কিন্তু খোলা এই মাঠে এসে পা আর চলছিলো না! যেমনটা বলছিলাম ঘন্টাখানেক হলো এখানে বসে আছি। বসে আছি সবুজ ঘাসে পা ছড়িয়ে! আজ অনেক দিন পর বিকেল দেখছি! দেখছি বসন্তের বিষন্ন বিকেলের চলে যাওয়া। আর কয়েকটি দিন, তারপরই বিদায় নেবে বসন্ত। ভাবছিলাম, ষড় ঋতুর এই সময়টাকে চেনার উপায়টা কি?
কিন্তু এই ভাবনার ফাকে কখন যে আমার নাগরিক যন্ত্রনা সঙ্গী হয়ে এখানে চলে এসেছে টের পাইনি। সবকিছু পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়তো সম্ভব নয়। মাথায় তখন আমার রাহুল দেব বর্মনের অসাধারন একটা গান...
''তুমি কতো যে দুরে.. কোথায় যে হারিয়ে গেলে; আমার জীবন হতে.. ঠিকানা নাই.. বলো খুঁজি কোথায়...''


 পা বাড়িয়েছিলাম এক টুকরো সবুজের আশায় প্রতীক্ষায় ছিলাম অসাধারন কিছু স্মৃতি সঙ্গী করে আবারো ধরবো ঢাকার পথ কিন্তু একি গোধুলী বেলায় মন আরো বেশি বিষন্ন হয়ে উঠছে কেনো? কেনো সময় আমার হাতের মুঠোয় নেই? আজকের এই বিকেল আরেকটু দীর্ঘ হলে এমন কী ক্ষতি হতো!

আশ্চর্য এক রঙ ছড়িয়েছে আকাশে! বসন্তের শেষ বিকেলের আকাশ যে এতোটা রহস্যময় হয়ে উঠতে পারে আগে তো কখনো খেয়াল করেনি। আহ রহস্যময়তা, শুধু আমার সঙ্গেই কেন?

এখানে বাতাস আরো বেড়েছে! কেমন যেন হু হু শব্দ হচ্ছে। এই শব্দের সঙ্গে অবশ্য পরিচয় হয়েছে বেশ কয়েকদিন হলো! আমার নিজের ভেতরেও এমন হু-হু শব্দ টের পাই মাঝে মধ্যে।
 
পঞ্চম দ্যার সুরে শিল্পী গেয়ে চলছেন... ''ঠিকানা নাই.. বলো খুঁজি কোথায়...''
বসন্তের এই এলোমেলো বিষন্ন বিকেলে আমার আর রক্ষে নেই। কেমন যেন স্মৃতিকাতর হয়ে উঠছি আরো। আমি সম্ভবত ভাগ্যবান মানুষ। কপোল গড়িয়ে কয়েক ফোটা নোনা জল কখন যে পড়লো টেরই পেলাম না!

আহা! এমন মন উদাস করে দেয়া বিকেল যেন ফিরে আসে বার বার..

Sunday, April 11, 2010

আহ! শর্ষে ইলিশ!!


আমি খুব একটা ভোজনরসিক নই! অন্যভাবে বলা যায় খাবার-দাবার একটু এড়িয়েই চলি। কিন্তু আজ 'না' করলে হয়তো আক্ষেপই হতো অবলম্বন! রুপালি ইলিশের আমন্ত্রন এড়িয়ে যাই কী করে..বৈশাখের আগে এমন নিমন্ত্র কবুল করলাম।

কিন্তু পরিবেশনা যে এমন লোভনীয় হবে কে জানতো? খাবার আগে তাই ক্যামেরাবন্ধী করে রাখলাম। কি জিভে জল এসে গেছে? সেটাই তো স্বাভাবিক। বাঙালি মাত্রই ইলিশ প্রেমী। কিন্তু আগের সেই স্বাদ কি আছে? আমার নিজের অভিজ্ঞতাই এখন হয়তো গল্পের মতো শোনাবে। মনে আছে সেই ছোটবেলায় আমার বাবা ইলিশ নিয়ে বাজার থেকে ফিরতেন। মা রান্না করতেন আর পড়ার টেবিলে বসে সেই ইলিশের গন্ধ পেতাম আমরা আমরা ভাই-বোনরা মিলে অপেক্ষা করতাম কখন মা ডাকবেন।

এরপর খাবারের টেবিলের সেই স্বাদ লেখে হয়তো বোঝানো যাবে না। আহ, চোখ বুজলেই মনে পড়ে হারানো সেই দিন! ইলিশের তেলে ভাত যখন মাখাতাম-তখন সেটা আর ভাত থাকতো না, হয়ে উঠতো অমৃত! আবদার করতাম প্রায়ই- '' মা, আরো খানিকটা ইলিশ হবে?'' মা হাসি মুখে আরো একটা পিস তুলে দিতেন পাতে! একজন বায়না করলে সবাই মিলে শুরু হতো, '' আমার জন্যও একটা চাই'' মা সেই চেনা হাসি মুখে সামাল দিতেন আমাদের। খাওয়া শেষেও হাতে লেগে থাকতো অপুর্ব এক গন্ধ। ইলিশ দিয়ে ভাত গেলাম যে..!!

এখন সেই স্বাদ-গন্ধ কোথায়? যতো দিন যাচ্ছে সব কিছুই কেমন যেন বিবর্ন হয়ে উঠছে! জাতীয় মাছ হয়ে উঠছে দুর্লভ! মাঝারি সাইজের ইলিশের কেজি এখন ৭০০ টাকার মতো। সহজলভ্য সেই ইলিশ সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে অনেকের। ইলিশ পাতে নিয়ে ভাবছিলাম সেই সব দিনের কথা! এমন রঙীন দিন কি আর কখনোই ফিরে আসবে না?

নস্টালজিক হয়ে উঠাকে প্রশ্রয় দিলাম না। কেননা, এখন যে শুধুই শর্ষে ইলিশে ভুরিভোজের সময়!!

Saturday, April 10, 2010

তোমায় ভাবছি..

ইংরেজিতে অনেক কথা খুব সহজে বোঝানো যায়। শুনতেও ভালো লাগে। কিন্তু অনুবাদ ভালো হলে বাংলা শব্দ যে কতো মধুর হয়ে ধরা দেবে সেটা ভাবতেও পারবেন না!

ভাবছিলাম i miss you বাক্যটির অনুবাদ কি হতে পারে?
আমি নিজের মতো করে কিছু ভাবানুবাদ করলাম এখানে.. (প্রচেস্টা যদিও হাস্যকর অথবা ছেলেমানুষিতে ভরা।)

  • তোমায় মনে পড়ে
  • আহ! তুমি যদি পাশে থাকতে
  • দেখতে মন চাইছে তোমায়
  • তুমি পাশে নেই কেন?
  • তুমি পাশে থাকলো সব ভালো লাগে
  • তুমি ছাড়া সব কিছু বিবর্ন
  • ফিরে এসো
  • আবার কবে হাত ধরবে?
  • তোমায় ভুলতে পারছি না!
  • আমার ভাবনায় শুধুই তুমি
  • জলদি তোমাকে দেখতে চাই
  • আবার পাশাপাশি হাটতে চাই
  • তোমায় ভাবছি

এমন ভাবানুবাদ হয়তো আরো অনেক করা যাবে। কিন্তু কেন আমার ভাবনায় এখন এলোমেলো এই প্রসঙ্গ? কারন একটাই আজ তোমাকে আরো বেশি করে মনে পড়ছে। আচ্ছা তুমি পাশে নেই কেন? আমাদের যে দিন গেছে তা কি একেবারেই গেছে? আমার ভাবনারা আমাকে গ্রাস করে ফেলেছে আজ.. এখন ভাবতেই থাকবো, কিছুই করার নেই আর..
তোমায় ভুলতে পারছি না!


ভালো থেকো.. শুধু বলতে চাই- Officially I miss you..


Friday, April 9, 2010

ছবির হাট..


বৈশাখ এসে গেলো প্রায়! আরো একটা নতুন বছর, নতুন স্বপ্ন..! চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে আজ ভালো করেই টের পেলাম নতুন আরেকটি বাংলা বছর এসে যাচ্ছে

পহেলা বৈশাখ যেমন হয়ে উঠেছে সার্বজনিন উৎসব, তেমনি মঙ্গল শোভাযাত্রাও হয়ে উঠেছে এর অংশ নতুন বছরের সেই সকালের শোভা যাত্রার প্রস্তুতি চলছে এখানে চারুকলার শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত, ভীষন ব্যস্ত! হাতে সময় খুব একটা নেই, দ্রুত তুলের আচড়ে রঙীন করে তুলছেন সবকিছু!

অন্যরকম মুগ্ধতা নিয়ে দেখছিলাম তাদের কাজ, শিল্পিত ছোঁয়া..! প্রতিবছরই যত্নের সঙ্গে এই কাজটি করে আসছেন তারা। আত্নার উৎসব বলে কথা! বেশ কয়েকবছর ধরেই রাজধানী ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখের এই আয়োজন পেয়েছে ভিন্ন মাত্রা। রমনার বটমুলে সেই ভয়ানক সন্ত্রাসী হামলা প্রানের উৎসবের সামনে বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। রমনার বটমুল আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরেই মুলত ঢাকার উৎসব।

বাংলা উইকিপিডিয়ায় এনিয়ে লেখা হয়েছে-
(
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে পহেলা বৈশাখের মূল অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দু সাংস্কৃতিক সংগঠন ছাযানট-এর গানের মাধ্যমে নতুন বছরের সূর্যকে আহবান। পহেলা বৈশাখ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ছাযানটের শিল্পীরা সম্মিলত কন্ঠে গান গেয়ে। নতুন বছরকে আহবান জানান। স্থানটির পরিচিতি বটমূল হলেও প্রকৃত পক্ষে যে গাছের ছায়ায় মঞ্চ তৈরী হয সেটি বট গাছ নয, অশ্বত্থ গাছ। ১৯৬০-এর দশকে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠির নিপীড়ন সাংস্কৃতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে ১৯৬৭ সাল থেকে ছাযানটের এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা।

ঢাকার বৈশাখী উৎসবের একটি আবশ্যিক অঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখে সকালে এই শোভাযাত্রাটি বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায চারুকলা ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয। এই শোভাযাত্রায গ্রামীণ জীবণ এবং আবহমান বাংলাকে ফুটিয়ে তোলা হয়। শোভাযাত্রায় সকল শ্রেণী-পেশার বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রার জন্য বানানো নয রং-বেরঙের মুখোশ বিভিন্ন প্রাণীর প্রতিলিপি। ১৯৮৯ সাল থেকে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা পহেলা বৈশাখের উৎসবের একটি অন্যতম আকর্ষণ।)

আমাদের প্রানের উৎসব পহেলা বৈশাখের প্রতীক্ষায় আছি...