Monday, February 22, 2016

স্মৃতির স্যুভেনিগুলো ভেঙে দিন

একজন মানুষের জানা দরকার জীবনের শেষ ধাপ কোথায়? আমরা যদি একটা ধাপে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সময় থাকি তাহলে আমরা অন্য ধাপগুলোর আনন্দ আর উদ্দেশ্য থেকে বঞ্চিত হবো। জীবনের এইসব ধাপগুলো পূর্ণ করা, দরজা বন্ধ করা, অধ্যায়ের ইতি টানা, আসলে যাই বলা হোক না কেন আসল কথা হলো যে অতীত, যে সময় ফুরিয়ে গেছে তাকে পেছনে ফেলে আসা।

সম্পর্ক ভেঙে গেছে? চাকরি চলে গেছে? বাবা-মার বাসা থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছে? কিংবা অনেক অনেকদিনের গড়া বন্ধুত্বা এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেছে?
কেন চাকরি গেল, কেন সম্পর্ক ভাঙলো, কেন সব শেষ? ‘কেন’-র ভুবনে ডুব দিয়ে অনেক সময় পার করা যায়।

অনেক অনেক মুহূর্ত চিন্তা করে কাটিয়ে দেয়া যায়। জীবনের এইসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো কেন হঠাত্ আচমকা ধুলোর সঙ্গে মিশে গেল সেই কারণ খুঁজে বের করার আগে আপনি হয়তো একটুও এগোতো চাইবেন না, পা চলতে চাইবে না! ‘সব শেষ’ নামের হাহাকার সেই ‘কেন’-র উত্তর খুঁজতে আপনাকে অহর্নিশ পাগল করে দেবে।

কিন্তু এমন আচরণ আপনাকে বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন আর সন্তানের ওপর চাপ তৈরি করবে। সেই চাপ অসহনীয় হয়েও যেতে পারে। আসলে সবাই তাদের জীবনের ধাপগুলো শেষ করছে, করেছে। পাতা উল্টাচ্ছে, জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। আর সেই তারাই আপনাকে এক জায়গায়, একই বৃন্তে আর একটাই প্রশ্নের সামনে আটকে থাকতে দেখে মন খারাপ করবে।
সত্যি বলতে কী, যা চলে যায় তাকে চলে যেতেই দেওয়াই উচিত। সেটা করতে গিয়ে যত তীব্র বেদনাই হোক অতীত সেই সম্পর্ক, স্মৃতির স্যুভেনিগুলো ভেঙে দিন, সরিয়ে ফেলুন, প্রয়োজনে দান করে দিন কোনো এক অনাথ আশ্রমে, বিক্রি করে দিন, স্রেফ ভুলে যান।

এই আলো-বাতাস, দৃশ্যমান পৃথিবীর সবকিছুই হলো অদৃশ্য পৃথিবীর ছায়া। আমাদের যাপিত জীবনে কিছু স্মৃতি ফেলে দেয়ার অর্থ একটাই-নতুন কিছু স্মৃতির জন্য তৈরি আপনার মন, আপনি নিজে। যে চলে গেছে, চলে যেতে চায় তাকে ছেড়ে দিন। সেই সব মানুষ আর তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।
আমার মনে হয় জীবনটা স্রেফ তাস খেলার মতো। আসলে কার্ডগুলো আমরা কেউ চিনে রাখি না। তাই কখনও আমরা জিতে যাই, আবার কখনও বা হেরে যাই। কোনো প্রতিদান আশা করবেন না, না কোনো প্রতিদানই নয়। বাহ-বা-র আশাও করবেন না। আপনার মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে কী হচ্ছে না, ভালোবাসা পেলেন কী পেলেন না ভাবার দরকার নেই।

কিছু একটা হারাতে আপনি কতটা কষ্টে নীল হয়েছেন, কতটা ভুগেছেন? অনুভূতির জানালা খুলে, আবেগের টেলিভিশন খুলে সেই অনুষ্ঠান বারবার দেখা বন্ধ করুন। এসব কিছু আপনার মনকে বরং বিষন্ন করে দেবে। একটু একটু করে নিজের অজান্তেই আরও বেশি একা হয়ে উঠবেন আপনি। এছাড়া আর কিছুই হবে না, হয়ও নি কোনোদিন!
ঠিক না থাকা কাজের প্রতিশ্রুতি, ভেঙে যাওয়া প্রেম এসব মেনে না নেয়ার মতো বোকামি আর ক্ষতিকর কিছুই হতে পারে না।

জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরুর আগে আগের অধ্যায়টিকে শেষ করতেই হবে। হাসিমুখে নিজেকে বলুন-যা চলে গেছে তা একেবারেই গেছে, ফিরে আর আসবে না কখনও। যে জিনিস কিংবা যে মানুষটাকে ছাড়া একসময় বেঁচেছিলেন সেই সময়ের কথা ভাবুন। সবকিছুই প্রতিস্থাপনীয়। অভ্যেস আর প্রয়োজন এক ব্যাপার নয়।

কথাগুলো অবশ্য বলে ফেলা গেল অনায়াসে কিন্তু মেনে নেয়া কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।একটু একটু করে প্রতিদিন জীবনের চক্রটা পূরণ করুন। গর্ব, অপ্রাপ্তি, অক্ষমতা আর অহংবোধের জন্য নয়, আপনার জীবনের সঙ্গে ব্যাপারগুলো যায় না সেই কারণে কাজগুলো করুন। আর দরজা বন্ধ করে দিন, প্লেয়ারের সিডি বদলান, ঘরটা পরিস্কার করুন, ধুলো-বালি ঝেড়ে ফেলার এইতো সময়।

অতীতের ‘আমার আমি’র মধ্যে আটকে না থেকে বরং হয়ে উঠুন ‘বর্তমানের আপনি...’


                                                   ############

(‪#‎পাওলো_কোয়েলো‬ বরাবরই তরুণদের জন্য বড় এক অনুপ্রেরণার নাম। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি থাকা মন তার লেখাগুলোতে খুঁজে পায় বেঁচে থাকার নতুন মন্ত্র। স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন ব্রাজিলিয়ান এই লেখক। তার ব্লগ থেকে তেমনই এক আশা জাগানিয়া লেখা ভাবানুবাদ করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। সেটা গতবছরের জুনে বন্ধু তানভীর তারেক ছেপেছিলেন ইত্তেফাকে। টাইমলাইনেও এটা তুলে রাখলাম।)

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/vino-chikhe/2015/06/05/52694.html

1 comment:

aapon TARIQ said...

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/vino-chikhe/2015/06/05/52694.html