মিথ্যে বলবো না, বাঙালি বলেই দাদার প্রতি আমার এই বাড়তি টান। সৌরভ যখন ব্যাট করেন, তখন নিজের এই সাংবাদিক পরিচয়টা ভুলে যাই। হয়ে উঠি একেবারেই নিখাদ সৌরভপ্রেমী! একবার ভাবি আচ্ছা কলকাতার বেহালায় ওই ব্রাক্ষন পরিবারে জন্ম না হয়ে যদি সৌরভের জন্ম ব্যাঙ্গালোর কিংবা মুম্বাইয়ে হতো তাহলে কি এভাবে এতোটা সৌরভপ্রেমী হয়ে উঠতাম?
- না মোটেও না। এখানে শতভাগ পক্ষপাতিত্ব!
দুই বাংলা ভাগ হয়েছে ঠিকই কিন্তু ওপারের সৌরভ ভাল করলে ভাল লাগে! ভাল লাগে কলকাতার একজন প্রীতম, শান কিংবা রানী মুখার্জি বলিউড মাতালেও! মনে হয় ওরা তো আমাদেরই। প্রায়ই উইকিপিডিয়া খুঁজে দেখি কে উঠে আসলো ওপার বাংলা থেকে। উঠতি কোন তারকা হলেই হলো - খুজে দেখতে চাই ও বাঙালি কিনা। যেমনটা ওইদিন জুবেন গার্গকে নিয়ে হলো। 'ইয়া আলী মাদাত আলী' গেয়ে আলোচনায় চলে আসা এই তরুনও বাঙালি, জানার পর তার গান আরো বেশি শুনছি...
কথা হচ্ছিল সৌরভকে নিয়ে। মানে আমাদের দাদা! কলকাতার ইডেনের পর রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাঙালোরেও হেসেছে ওর ব্যাট! কথাটা খুব সহজ করে বলা হয়ে গেলো। কেননা, ও যা করেছে তা মোটেও সহজ ছিলনা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬১ রান তুলতেই যখন চার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হাওয়া, তখন যুবরাজ সিংকে নিয়ে খেললেন সত্যিকারের এক গ্রেট ইনিংস। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো দাদার ব্যাট থেকে এলো ডাবল সেঞ্চুরি! থামলেন ২৩৯ রান করে।
চমকের এখানেই শেষ নয়, দ্বিতীয় ইনিংসেও ঝড় তুলছেন দাদা। আজ ব্যাঙালোর টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে তো দেখলাম ৬৩ রান করে অপরাজিত সৌরভ মাঠ ছাড়ছেন। ৯৯তম টেস্টে আরেকটা সেঞ্চুরি কী এসে যাবে নাকি?
আসলে তো আরো ভালো, না আসলেও সমস্যা নেই। তিন টেস্টের সিরিজে পাচশ'র বেশি রান তো এরইমধ্যে করেছেন। হয়েছেন ৬ হাজার রান ক্লাবের সদস্যও!
টেস্টে অবশ্য দাদার রান একটু কমই। পাচ কিংবা ছয়নম্বরে ব্যাট করতে হয়েছে বলে সুযোগও কিছুটা কম ছিল ওর। কিন্তু ওয়ানডেতে সৌরভ সর্বকালের সেরাদের একজন। ১১ হাজার রানের ওই মাইলফলক টপকে গেছেন আগেই।
রানের ওইসব হিসেব তো আছেই, সঙ্গে অধিনায়ক সৌরভ ভারতীয় দলকে দিয়েছেন নতুন এক চেহারা! তার সময়েই ডিফেনসিভ ভারত হয়েছে এটাকিং! নাক উচু ব্রিটিশদের লডর্সের বারান্দায় জার্সি খুলে সৌরভের সেই উদ্দাম নৃত্য এখনো তো ভারতীয় ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন। পরিসংখ্যান এটাই বলছে আমাদের দাদা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অধিনায়ক!
অথচ তাকে নিয়েই কিনা গ্রেগ চ্যাপেল, কিরন মোরে, রবি শাস¿ীরা অনেক খেলা খেলেছেন। নোংরা সব কাজকারবার!!! ছুড়ে ফেলেছেন জাতীয় দলের বাইরে। কিন্তু বেঙ্গল টাইগার বলে কথা! সৌরভ ফিরেছেন, ফেরার মতোই!
আমাদের বাঙালিদের ইতিহাস এমনই বর্নাঢ্য। তারপরও কেন জানি আমরা হীনমন্যতায় ভুগি। আমাদের এপারের জেমস বলিউড মাতাচ্ছেন, আশা করছি সামনে হয়তো কোন বাঙলি হলিউডও মাতাবে! একদিন অনেক কিছুই চলে আসবে বাঙালিদের দখলে! বাঙালি সৌরভ ছড়িয়ে যাবে সবখানে। আমরা পারবো...
স্বপ্ন দেখতে বাধা কোথায়? সায়ীদ স্যার তো বলেই দিয়েছেন -মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়!
No comments:
Post a Comment