Monday, February 29, 2016

গোধুলির বিষন্নতা

আমরা প্রত্যেকেই আসলে নতুনের পুজারি। আজ পুবে যে সুর্যটা উঠল, প্রবল দাপট নিয়ে রাজত্ব করল পুরোটা দুপুর, বিকেলে মিষ্টি আলো ছড়াল, গোধুলির বিষন্নতায় বিদায় নিতেই আমরা তাকে ভুলে যাবো। মনেও রাখবো না আর কোনদিন। রাতের অন্ধকারে প্রতীক্ষার ডালপালা মেলবে। ঘুম ভাঙ্গতেই আমাদের অস্তিত্বের পুরোটা জুড়ে থাকবে নতুন আরেক সুর্য!

এটাই নিয়ম। কোন কিছুই অপ্রতিস্থাপনীয় নয়। ‘আমাকে ছাড়া চলবে না’, আমি চলে গেলে সব শেষ.. -এমন অহংবোধের জায়গা কোথায়? অপরিহার্য বলে কিছু হয় না। আপনি চলে গেলেন মানে আপনি নেই, এপিটাফ লেখা হয়ে গেল; -নতুন কেউ এসে সেই শুন্যস্থান পুরন করে নেবে।

তারপর আপনিও সেই ডুবে যাওয়া সুর্যটা, যাকে কেউ কোনদিন আর মনেই রাখে না, অথচ একদিন...

Sunday, February 28, 2016

দুলাল ভাই

বিপদ হলো আর্শিবাদ- কোথায় যেন কুড়িয়ে পেয়েছিলাম ছোট্ট অথচ মহামুল্যবান এই বাক্য, মনে নেই। মাহাত্ম্যটা বুঝতে অবশ্য বেশ কিছুদিন লেগেছে! শুরুতে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। এ আবার কেমন কথা? বিপদ আবার আর্শিবাদ হয় কী করে! দুঃখ আর বিপদ ছাড়া জীবনের সব নতুন কিছুই ভালো। এই দুটো ব্যাপার মেনে নিতে মন চায়না। তাহলে ‘মেনে নিতে না চাওয়া’ বিপদ কী করে উপহার হয়ে আসে আমাদের যাপিত জীবনে!

জীবন কি আর জলের মতো সহজিয়া? বেঁচে থাকার পথ কি শুধুই ফুলে ফুলে সাজানো? না, বলেই হয়তো কোন এক নভেম্বরের শেষ দিনটায় উড়ে আসে দুঃসংবাদ। বিনা অপরাধে ফাঁসিও হয়ে যায় কখনো কারো! কেউ কিছু হয়তো কড়া ভাষাতেই কিছু বলে, কেউ আবার চুপ!

যখন ‘বিপদ’ নামের নাছোড়বান্দা আমার কাঁধে চেপে বসল ঠিক তখনই জানলাম- জীবনের অন্য এক মানে। সিন্দাবাদের ওই ভুত কাঁধে চেপে বসার পরই চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকল কিছু মুখ। কিছু মানুষের অবয়ব। কিছু হারিয়ে যাওয়া নাম! কাছের মানুষ দুরের মানুষ বুঝে নেওয়ার ক্ষণ! সত্যিই তো সুখ ভাগাভাগি করে নেওয়া যায়। কিন্তু দুঃখ ভাগাভাগির সময় দেখা মেলে কম মানুষেরই। সত্যিকারের বন্ধুর দেখা মেলে তখনই।

ব্যস্ততা নামের অজুহাতে ধুলো পড়ে গেছে সেই সম্পর্কগুলোয়! ভুলে বসে আছি প্রিয় মুখ, প্রিয় মানুষদের। কিন্তু কি আর্শ্চয্য হঠাৎ করেই বানের পানির মতো হুড়মুড় করে এলো মিষ্টি মিঠেস্মৃতির দল। মনে পড়ল দুলাল ভাইয়ের কথা। দুলাল মাহমুদ। মনে পড়ল সেইসব সংগ্রামের দিনের কথা। মনে পড়ল সুন্দর সব মুহুর্তের কথা। উনার হাত ধরেই অন্য অনেকের মতো আমারও সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। দুলাল ভাইয়ের প্রশ্রয় আর পরিচর্যাতেই বেড়ে উঠা আমাদের একটা প্রজন্মের। দুঃসময়ে এমন একজনের কথাই তো মনে আসবে সবার আগে!

মানুষটির সাথে প্রথম কবে দেখা মনে করতে পারছিলাম না। তবে সেটা ১৯৯৭ কিংবা ১৯৯৮ হবে হয়তো। খেলার প্রতি ঝোঁক ছিল সেই ছোটবেলাতেই। সঙ্গে লেখালেখিও। তখন ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে ক্রীড়াজগত নামটা আকরাম খান-আমিনুল ইসলাম বুলবুলের মতোই পরিচিত। সেই পাক্ষিকে লেখা দিতে যাবো-ভাবতেই বুক কেঁপে উঠেছিল। সম্পাদকের রুমে যেতে সেই ভয়, আতংক দ্বিগুন হয়ে গেল! দু’ একটা আইডিয়ার কথা বললাম, লিখতে চাইলাম। সম্পাদক মুখ গম্ভীর কওে বললেন, ‘আর এটা জাহাঙ্গীর লিখবে।’ আরেকটা বললাম, ‘না, এটাও হবে না, রফিক ফুটবল নিয়ে লেখে। আপনি নতুন কিছু চিন্তা করেন।’

বুঝলাম এই ভদ্রলোকের মন জয় করতে হলে ভাবনাতেও নতুনত্ব চাই। আর সেটা সবার আগে। ব্যস শুরু হয়ে গেল আমার লড়াই। এ লড়াইয়ের হারবার পাত্র নই আমি। আর একটু একটুদুলাল ভাইয়ের প্রিয় হয়ে উঠতে থাকলাম।

এরপর দীর্ঘসময় উনার সানিধ্য পেয়েছি। আর তিনি হয়ে উঠেছেন আমাদের এক প্রজন্মের কাছে আদর্শ। কেন? তাহলে শুনুন-আমরা মানুষই বুঝি এমন, নিজের যোগ্যতার ভান্ডারে এক থাকলে দুই বলে স্বস্তি পাই। ক্ষমতার দাপট দেখানোটা তো রক্তে মিশে আছে। এমন এক সময়ে দুলাল ভাই উল্টো পথের এক মানুষ। নিজেকে সব সময় নৈপথ্যের মানুষ করেরাখতেই স্বচ্ছন্দ্য উনার। অথচ কী গুন নেই? অসাধারন শব্দ চয়নে লিখতে জানেন। সম্পাদনায় তিনি যে কতোটা পারফেকশনিষ্ট সেটাতো তার লেখা বই আর ক্রীড়াজগতই প্রমান। গবেষণাধর্মী কাজও করেছেন অনেক।

আর ক্ষমতার দাপট বলে কিছু নেই দুলাল ভাইয়ের অভিধানে। না হলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও আরো অনেক অনেক দুর যেতে পারতেন তিনি।

তাতে যে কোন আক্ষেপ নেই উনার সেটা দু’ এক কথা বললেই আঁচ করা যায়। অন্যরা যখন ¯্রােতে গা ভাসিয়ে দিয়ে আয়েশী জীবন খুঁজে নিয়েছে তখন তিনিসংগ্রাম করে বেঁচে আছেন, অহর্নিশ। তাই এই নষ্ট সময়ে যখন সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবো-যাচ্ছি করছে তখন প্রানভরে নিঃশ্বাস নিচ্ছেন দুলাল ভাই।তৃপ্তির বেঁচে থাকা।

এইতো কিছুদিন আগে দেখা হল। মাঝে অনেকটা সময় কেটে গেছে। তিনি সেই আগের মতোই আছেন। নির্লোভ এই মানুষটি ভাল আছেন, বেঁচে থাকার মতো মাথা উচু করে বেঁচে আছেন, প্রতিটা মুহুর্ত!
দুলাল ভাই আপনার জন্য অতলান্ত শ্রদ্ধা। আপনার মতো মানুষরা আছে বলেই হয়তো এখনো অন্ধকার সুরঙ্গের শেষে আশার ছোট্ট প্রদীপটি এখনো জ্বলে আছে। এখনো ‘‘সৎ’’ ‘‘নির্লোভ’’ শব্দ দুটো যাদুঘরে চলে যায়নি। আপনারা আছেন বলেই হয়তো- আমরা ভাল আছি, বেঁচে আছি!

শুভ জন্মদিন দুলাল ভাই...

Monday, February 22, 2016

স্মৃতির স্যুভেনিগুলো ভেঙে দিন

একজন মানুষের জানা দরকার জীবনের শেষ ধাপ কোথায়? আমরা যদি একটা ধাপে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সময় থাকি তাহলে আমরা অন্য ধাপগুলোর আনন্দ আর উদ্দেশ্য থেকে বঞ্চিত হবো। জীবনের এইসব ধাপগুলো পূর্ণ করা, দরজা বন্ধ করা, অধ্যায়ের ইতি টানা, আসলে যাই বলা হোক না কেন আসল কথা হলো যে অতীত, যে সময় ফুরিয়ে গেছে তাকে পেছনে ফেলে আসা।

সম্পর্ক ভেঙে গেছে? চাকরি চলে গেছে? বাবা-মার বাসা থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছে? কিংবা অনেক অনেকদিনের গড়া বন্ধুত্বা এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেছে?
কেন চাকরি গেল, কেন সম্পর্ক ভাঙলো, কেন সব শেষ? ‘কেন’-র ভুবনে ডুব দিয়ে অনেক সময় পার করা যায়।

অনেক অনেক মুহূর্ত চিন্তা করে কাটিয়ে দেয়া যায়। জীবনের এইসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো কেন হঠাত্ আচমকা ধুলোর সঙ্গে মিশে গেল সেই কারণ খুঁজে বের করার আগে আপনি হয়তো একটুও এগোতো চাইবেন না, পা চলতে চাইবে না! ‘সব শেষ’ নামের হাহাকার সেই ‘কেন’-র উত্তর খুঁজতে আপনাকে অহর্নিশ পাগল করে দেবে।

কিন্তু এমন আচরণ আপনাকে বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন আর সন্তানের ওপর চাপ তৈরি করবে। সেই চাপ অসহনীয় হয়েও যেতে পারে। আসলে সবাই তাদের জীবনের ধাপগুলো শেষ করছে, করেছে। পাতা উল্টাচ্ছে, জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। আর সেই তারাই আপনাকে এক জায়গায়, একই বৃন্তে আর একটাই প্রশ্নের সামনে আটকে থাকতে দেখে মন খারাপ করবে।
সত্যি বলতে কী, যা চলে যায় তাকে চলে যেতেই দেওয়াই উচিত। সেটা করতে গিয়ে যত তীব্র বেদনাই হোক অতীত সেই সম্পর্ক, স্মৃতির স্যুভেনিগুলো ভেঙে দিন, সরিয়ে ফেলুন, প্রয়োজনে দান করে দিন কোনো এক অনাথ আশ্রমে, বিক্রি করে দিন, স্রেফ ভুলে যান।

এই আলো-বাতাস, দৃশ্যমান পৃথিবীর সবকিছুই হলো অদৃশ্য পৃথিবীর ছায়া। আমাদের যাপিত জীবনে কিছু স্মৃতি ফেলে দেয়ার অর্থ একটাই-নতুন কিছু স্মৃতির জন্য তৈরি আপনার মন, আপনি নিজে। যে চলে গেছে, চলে যেতে চায় তাকে ছেড়ে দিন। সেই সব মানুষ আর তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।
আমার মনে হয় জীবনটা স্রেফ তাস খেলার মতো। আসলে কার্ডগুলো আমরা কেউ চিনে রাখি না। তাই কখনও আমরা জিতে যাই, আবার কখনও বা হেরে যাই। কোনো প্রতিদান আশা করবেন না, না কোনো প্রতিদানই নয়। বাহ-বা-র আশাও করবেন না। আপনার মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে কী হচ্ছে না, ভালোবাসা পেলেন কী পেলেন না ভাবার দরকার নেই।

কিছু একটা হারাতে আপনি কতটা কষ্টে নীল হয়েছেন, কতটা ভুগেছেন? অনুভূতির জানালা খুলে, আবেগের টেলিভিশন খুলে সেই অনুষ্ঠান বারবার দেখা বন্ধ করুন। এসব কিছু আপনার মনকে বরং বিষন্ন করে দেবে। একটু একটু করে নিজের অজান্তেই আরও বেশি একা হয়ে উঠবেন আপনি। এছাড়া আর কিছুই হবে না, হয়ও নি কোনোদিন!
ঠিক না থাকা কাজের প্রতিশ্রুতি, ভেঙে যাওয়া প্রেম এসব মেনে না নেয়ার মতো বোকামি আর ক্ষতিকর কিছুই হতে পারে না।

জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরুর আগে আগের অধ্যায়টিকে শেষ করতেই হবে। হাসিমুখে নিজেকে বলুন-যা চলে গেছে তা একেবারেই গেছে, ফিরে আর আসবে না কখনও। যে জিনিস কিংবা যে মানুষটাকে ছাড়া একসময় বেঁচেছিলেন সেই সময়ের কথা ভাবুন। সবকিছুই প্রতিস্থাপনীয়। অভ্যেস আর প্রয়োজন এক ব্যাপার নয়।

কথাগুলো অবশ্য বলে ফেলা গেল অনায়াসে কিন্তু মেনে নেয়া কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়।একটু একটু করে প্রতিদিন জীবনের চক্রটা পূরণ করুন। গর্ব, অপ্রাপ্তি, অক্ষমতা আর অহংবোধের জন্য নয়, আপনার জীবনের সঙ্গে ব্যাপারগুলো যায় না সেই কারণে কাজগুলো করুন। আর দরজা বন্ধ করে দিন, প্লেয়ারের সিডি বদলান, ঘরটা পরিস্কার করুন, ধুলো-বালি ঝেড়ে ফেলার এইতো সময়।

অতীতের ‘আমার আমি’র মধ্যে আটকে না থেকে বরং হয়ে উঠুন ‘বর্তমানের আপনি...’


                                                   ############

(‪#‎পাওলো_কোয়েলো‬ বরাবরই তরুণদের জন্য বড় এক অনুপ্রেরণার নাম। ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি থাকা মন তার লেখাগুলোতে খুঁজে পায় বেঁচে থাকার নতুন মন্ত্র। স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসেন ব্রাজিলিয়ান এই লেখক। তার ব্লগ থেকে তেমনই এক আশা জাগানিয়া লেখা ভাবানুবাদ করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। সেটা গতবছরের জুনে বন্ধু তানভীর তারেক ছেপেছিলেন ইত্তেফাকে। টাইমলাইনেও এটা তুলে রাখলাম।)

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/vino-chikhe/2015/06/05/52694.html

Thursday, February 4, 2016

''প্লিজ কিছু একটা খেয়ে যেতেই হবে''

সেই দিন আর খুব বেশি দুরে নেই, আমি নিশ্চিত সেই দিন এসে গেল প্রায়। একদিন আরেফিন ইসলাম আরিফের আশপাশে এত্তো এত্তো মানুষ (পড়ুন নারী) থাকবে যে আমরা কেক-টেক কেটে জন্মদিন পালন করার সুযোগই পাবো না! তখন হয়তো আমরা কেক নিয়ে বসে থাকবো 'সেলেব্রেটি' আসছি, আসবো বলে আর আসবেনই না! তাইতো আগে-ভাগেই সেটা সেরে নিলাম।

এমন উপলক্ষ্য উদযাপনের জন্য পুরনো ঢাকা আমাদের গন্তব্য। বনানীর বিখ্যাত জ্যাম অবশ্য এদিন আমাদের প্রতি ছিল দারুণ সদয়। চোখের পলকে চলে গেলাম শাহবাগ। এরপর হেটে বাকীটা পথ। কেক কেটেই চলে আসতে চাইলাম আমরা। কিন্তু আরেফিনের হৃদয় আকাশের চেয়েও বড়। বারবার তার কাতর অনুরোধ- ''প্লিজ কিছু একটা খেয়ে যেতেই হবে।'' আমাদের না শুনবেই না, কিছুতেই!

এই রেস্টুরেন্ট সেই রেস্টুরেন্ট করতে করতে আমাদের টেনে নিয়ে গেল এক 'মরুভূমির জাহাজ।' যদিও দুভার্গ্য চেখে দেখা হল না উটের মাংশ। আফতাবের সেই গরম গরম বিফ খিচুরির জন্য আরেফিনকে ধন্যবাদ, একটু দেরি হয়ে গেল তাতে কী!

এরপর মেহদীর অনুরোধে মশলায় ঠাসা মিষ্টি পান মুখে না দিয়ে আর পারলাম না। তবে চাঁদনী রাতে চানখারপুল থেকে ফিরতি পথে ক্যাম্পাসের রাস্তা জুড়ে আড্ডা, এরপর চঞ্চলের প্রথম প্রেমের গল্প, কতোশত আক্ষেপ... কী করা হয়নি, কি করলে ভাল হতো... সাজ্জাদ-মেহদী বেশ উপভোগ করল।
তবে বেচারা খালিদ পুরোটা সময় ধরে কার যেন রাগ ভাঙ্গানোর চেস্টা করে যাচ্ছিল, দেখে মায়া হচ্ছিল আমার! আহারে প্রেম, চুন খসলেই রাজ্যের অভিমান, কতো শর্ত, কতো কৈফিয়ত!!

মনে রাখার মতো এমন মধ্যরাত আসে বলেই হয়তো তারপরও ভাল আছি...