Friday, January 29, 2010

আমাদের অলিম্পিক গেমস

কথায় আছে, যায় দিন ভালো যায়! বহুল প্রচলিত এ কথার যৌক্তিকতা বারবার প্রমাণিত হয়েছে আমাদের যাপিত জীবনে। আজ থেকে ঢাকাসহ ৫টি বিভাগীয় শহরে শুরু হচ্ছে এ অঞ্চলের ‘অলিম্পিক গেমস’ বলে পরিচিত এসএ গেমস! অথচ একদিন আগেও খেলার পাতার প্রায় পুরোটাজুড়েই ছিল ক্রিকেট। এর আগে যে দুবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত্ ক্রীড়া আসর, তখন এমনটা চোখে পড়েনি। ১৯৮৫ ও ১৯৯৩ সালের সে আসর ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে উন্মাদনা ছড়িয়েছিল শুরু হওয়ার মাসখানেক আগেই। দিন গণনায় ব্যস্ত থেকেছে মিডিয়াগুলো! সবাই প্রতীক্ষার প্রহর গুনেছে কখন শুরু হবে গেমস!
আজ অন্যরকম এক আবহের মধ্য দিয়েই শুরু হচ্ছে এসএ গেমসের ১১তম আসর। যেখানে ক্রীড়াপ্রেমীদের আগ্রহের পারদ নিচেই থাকছে। কিন্তু এরই মধ্যে এ গেমসে অংশ নিতে ঢাকায় চলে এসেছে দক্ষিণ এশিয়ার অপর সাত দেশ আফগানিস্তান, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। স্বাগতিক বাংলাদেশের অ্যাথলিটরাও ট্র্যাকে কিংবা মাঠে নামার অপেক্ষায়। ২৩টি ডিসিপ্লিনে ১৫৮টি স্বর্ণ পদকের জন্য লড়বেন ২ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগী! গতকাল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ টাওয়ারে সংবাদমাধ্যমকে যখন এ তথ্য দিচ্ছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী আহাদ আলী সরকার তখনও এসএ গেমসের ক্রীড়া স্থাপনাগুলোতে চলছিল হাতুড়ি-বাটালের ঠোকাঠুকির শব্দ!
১৭০ কোটি টাকা বাজেটের এ আসর উদ্বোধনের ২৪ ঘণ্টা আগেও শেষ হয়নি অনেক ভেন্যুর নির্মাণ এবং সংস্কার কাজ। তার চেয়েও বড় কথা গেমস ঘিরে যেমন স্পোর্টস ভিলেজ তৈরি করা হয় এখানে তেমনটা নেই। অনেকটা হযবরল অবস্থার মধ্য দিয়ে এগুচ্ছে সবকিছু! যদিও আয়োজক বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ গতকাল বলছিলেন, ‘এটার সঙ্গে অন্যসব ক্রীড়া আসরকে মেলানো ঠিক হবে না। এটা অলিম্পিক কিংবা কমনওয়েলথ গেমস নয়। আমরা আমাদের সীমিত সাধ্যের মধ্যে ভালো করার চেষ্টা করেছি। আর আপনাদের এটা জানিয়ে রাখছি আয়োজন সবাইকে মুগ্ধ করবেই।’সেই মুগ্ধতা আজ থেকেই শুরু হবে! চলবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আজ বিকাল সোয়া ৪টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে এ আসরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এরপরই থাকছে চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। মনোমুগ্ধকর হতে তো বাধ্য। উদ্বোধনী আর সমাপনী অনুষ্ঠানের পেছনেই যে খরচ হচ্ছে ৪৮ কোটি টাকা! দেশীয় সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি ১৩৩ মিনিটের তিন পর্বের এ অনুষ্ঠানে থাকবে অ্যাকুয়েটিক শো! ফ্রান্স থেকে এরই মধ্যে আনা হয়েছে ১৮ বাই ৪০০ ফুটের পুল! যেখানে জলের ঝড় তুলে সবাইকে মুগ্ধ করার প্রতীক্ষায় পারফরমাররা। মোট ২২ হাজার পারফরমার যুক্ত হচ্ছেন এ আয়োজনে।উদ্বোধনী আর সমাপনী অনুষ্ঠানই কিন্তু গেমস নয়। মাঝের ১০ দিনই হবে সত্যিকারের গেমস। পদক জয়ের জন্য অ্যাথলিটরা গতির ঝড় তোলার চেষ্টায় থাকবেন ট্র্যাকে। জলের বুকে ঝড় তুলবেন সাঁতারুরা। শুটাররা খুঁজবেন সঠিক নিশানা! আর এখানে বাংলাদেশের প্রতিযোগীরা স্বর্ণের দেখা পেলেই এদেশের ক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে সত্যিকার অর্থে জমে উঠবে গেমস। এবারের এসএ গেমসে ১৭টি সোনার পদক জয়ের প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে অনেক ডিসিপ্লিনের অ্যাথলিটরা অনুশীলন শুরু করলেও অনেকের মনে আছে আক্ষেপ। অবকাঠামোগত সুবিধার অভাবে অনেক অ্যাথলিটের প্রস্তুতির ঘাটতিও থাকছে!
রাজধানী ঢাকার পাশাপাশি অন্য ৪ বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা এবং সিলেট প্রস্তুত। আজ থেকে ক’দিন হয়তো সবার জীবনযাত্রায় যোগ হবে নতুন এ অধ্যায় এসএ গেমস। স্টেডিয়ামমুখী যারা হতে পারবেন না তাদের জন্য থাকবে টেলিভিশনে সরাসরি ২৩ ডিসিপ্লিনের পদক জয়ের লড়াই দেখার সুযোগ। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হবে ১৭টি জায়ান্ট স্কিন!এরই মধ্যে ল্যাম্পপোস্টের গায়ে লেগে থাকা ব্যানার-ফেস্টুনের সংখ্যা বেড়েছে! জাতীয় পাখি দোয়েলের নতুন নতুন সাজ চোখে পড়ছে সবার।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন কাল নিশ্চিত করেছে স্পোর্টস ভিলেজ না করতে পারলেও পুরো বাংলাদেশই সাজবে নতুন সাজে! হাজারো সমস্যা ঘিরে থাকা দেশের ১৫ কোটি মানুষ কিছুদিন অন্তত উত্সবের অনুষঙ্গ পাবে। প্রত্যেক ক্রীড়াবিদের জন্য দেড়শ’ কোটিরও বেশি মানুষের সামনে নিজেকে তুলে ধরার এইতো সুযোগ!

No comments: