বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমার অধ্যায় শেষ হয়েছে সেই আশির দশকে। মহানায়ক না ফেরার দেশে চলে গেছেন ১৯৮০ সালের অপয়া ২৪ জুলাই! দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও রোমান্টিক ছবির প্রসঙ্গ উঠলে এখনও সেই উত্তম কুমারে ফিরে যায় সবাই। যেমনটা হয় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। ভালোবাসা কিংবা বিরহ, আমাদের যাপিত জীবনের যে কোনো আবেগ প্রকাশের জন্য জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির ওই মহাপুরুষটির সাহিত্যকর্মই তো বাঙালির অবলম্বন! তার কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় সবকিছু!রবি ঠাকুরকে ছাপিয়ে যাওয়ার দুঃসাহস এখনও কেউ দেখায়নি ভারতবর্ষে। সেটার বোধকরি সুযোগও নেই! কিন্তু উত্তম কুমারের সেই চিরায়ত রোমান্টিক ইমেজ একজন ঠিকই পেরিয়ে যেতে পারতেন। একজন ঠিকই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারতেন তার ওই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। তেমনটাই মনে করেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা চিন্ময় রায়! তিনি এমন একজন মানুষের নাম বলেছেন যেটি শুনে আবার বিষম খাবেন না। সৌরভ গাঙ্গুলী—ভুল পড়েননি, সৌরভ গাঙ্গুলীই। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা এই অধিনায়ক যদি সিনেমায় নামতেন, উত্তমের মতোই সফল হতেন কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু!চিন্ময় রায়ের কথায় ‘যদি’র ব্যাপারটা থাকছে বলে ওই প্রসঙ্গ তুলে রাখাই ভালো! কিন্তু মহারাজ সৌরভ যে বাঙালির ‘বোকা বাক্সে’ রীতিমত আলোড়ন তুলেছেন। মাঠে সেই স্টেপ আউট করে ছক্কা মারার মতোই টেলিভিশন অ্যাঙ্করিংয়েও ম্যাজিক। একেবারে শান্ত গলায় ভণিতাবিহীন তার সেই উপস্থাপনায় ‘দাদাগিরি’ নামের অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা ওপার বাংলা ছাপিয়ে আছড়ে পড়ে এখানেও। টিআরপি রিপোর্ট বলছে, দুই বাংলা মিলিয়ে এ যাবতকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান এটিই।লর্ডসের ব্যালকনিতে ইংরেজদের সেই নাক উঁচু মানসিকতাকে একহাত দেখিয়ে জার্সি খুলে লাফানো সৌরভকে এবার দেখা গেছে সম্পূর্ণ অন্য ভূমিকায়। সেই অ্যাগ্রেসিভ ব্যাপারটা উধাও। কুইজ শো’র আদলে তৈরি অনুষ্ঠানের প্রতিযোগীদের সঙ্গে মিশে গেলেন ঠিক পাশের বাড়ির ছেলের মতো। সেই তারকা ইমেজের বালাই ছিল না। আর তাই তো বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপ্যাধায় থেকে শুরু করে যারাই অতিথি হয়ে এসেছেন সৌরভের, তারাই মুগ্ধ হয়েছেন উপস্থাপনায়। অনেকেই সবুজ মাঠের ২২ গজে ব্যাট হাতে শাসন করা সৌরভের টিভি পর্দায় সাবলীল উপস্থাপনা দেখে অবাক হয়েছেন। তবে সেই অবাক হওয়াদের দলে নেই ইরফান পাঠান। একটি পর্বে তিনিও ছিলেন দাদাগিরি’র অতিথি। ভারতীয় দলের এই অলরাউন্ডার বলছিলেন —‘পেশাদার উপস্থাপকদের চেয়ে দাদার (সৌরভ) এমন ভালো উপস্থাপনা দেখে আমি কিন্তু অবাক
হচ্ছি না। আমি
আগেও বলেছি, কমেন্ট্রিতে গেলে দাদা সেরাদের একজন হতেন! অসাধারণ ব্যক্তিত্বই এগিয়ে
দেয় সৌরভকে।'
অথচ ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলে দেড় ঘণ্টার সেই কুইজ অনুষ্ঠান শুরুর আগে তেমন প্রস্তুতি ছিল না সৌরভের। অবশ্য তিনি নিজেও ভাবেননি, সপ্তাহের তিন দিন রাতে চলা এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে এমন উন্মাদনা হবে। ৬ মাস চলার পর এখন শেষ প্রান্তে তার এই দাদাগিরি। কিন্তু চ্যানেলটির কর্তাব্যক্তিরা কিছুতেই ছাড়ছেন না তাকে। এরই মধ্যে তার হাত দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে তাদের অ্যাকাউন্টে। সৌরভের অনুষ্ঠান মানেই স্পন্সরদের লম্বা লাইন। মুম্বাইয়ের পত্রিকা মিড-ডে জানাচ্ছে, দাদাগিরি নাকি শুধু বাংলায় নয়, হিন্দিতেও হবে। ভারতীয় জাতীয় অনুষ্ঠানের মর্যাদা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে এটি।তবে আপাতত লাইট-ক্যামেরা অ্যাকশনের পর্ব শেষ! আগামী সপ্তাহে শেষ হবে দাদাগিরি’র প্রথম পর্ব। সৌরভ ব্যস্ত হয়ে পড়বেন কলকাতা নাইট রাইডার্স নিয়ে। আইপিএল ভাবনা এখন মাথায়। তাই টিভি পর্দার লাজুক আর রোমান্টিক নায়কের চেহারা নিয়ে উপস্থাপনা করা সৌরভকে ভুলে যান। কেননা, এবার যে মাঠের গুগলি অপেক্ষায় আছে তার!অনেকটা রূপকথার জাদুকরের মতো সৌরভ যেটাতেই হাত দিয়েছেন সেটাই সোনা হয়েছে! এবার শেষের শুরুটা ভালো করার মিশন! এরই ফাঁকে চিন্ময় রায়ের প্রস্তাবটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে কিনা কে জানে? মহারাজ চাইলে ঠিকই পারেন!
No comments:
Post a Comment