ভাগ্যে খুব একটা বিশ্বাস নেই আমার। কিন্তু এটা যখন ভাবতে যাই তখন নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মনে হয়। না, হলে আমার বাবাতো কোন মৌলবাদী হতে পারতেন। হতে পারতেন রাজাকার!
হননি বলেই গর্ব করে আমার বাবার কথা, আমার পরিবারের কথা বলতে পারি। আমি মানে তো আমার পরিবার। আমার সংস্কৃতি। যেখানে আমি নতুন সেখানে আমি শুধু আমাকেই প্রতিনিধিত্ব করি না। অনেক কিছুই জড়িয়ে যায় আমার সঙ্গে।
গতকাল আরো একটি বিজয় দিবস পালন করলাম। এখন থেকে ৩৬ বছর আগে যখন পাকিস্তান পাল্টে এই দেশটির নাম হয়েছিল বাংলাদেশ- তখন পৃথীবির আলো দেখিনি আমি। আমার জন্ম হয়েছে স্বাধীনতার অনেক পরে। সংগত কারনেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন স্মৃতিই আমার থাকার কথা নয়। কিন্তু কেন জানি একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি কিংবা আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি- কানে ভেসে আসে, আমি আনমনা হয়ে যাই। চোখে ভেসে উঠে পৃর্বসুরীদের সংগ্রাম,৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, জয়বাংলা আর একটি দেশের জন্ম যন্ত্রনার সেইসব দৃশ্য। কাল টেলিভিশনে দেখছিলাম- 'অস্তিত্বে বাংলাদেশ' নামের একটি ছবি। বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমানের জীবন নিয়ে তৈরি সেই ছবি দেখতে দেখতেই এক সময় খেয়াল করলাম আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে! নোনা জল চেপে রাখার চেস্টা করিনি!
পরম্পরায় এই আবেগ - অনুভুতি আমার নিজের অজান্তেই চলে এসেছে আমার মধ্যে। আমার বাবাকেও দেখেছি ঠিক এভাবেই ভেবেছেন সবকিছু। আমি ভাগ্যবান!
এবারের বিজয় দিবসটা কেন জানি অন্যরকম মনে হয়েছে আমার কাছে। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আল বদরদের বিচারের দাবী জানিয়ে এভাবে এর আগে দেশ এতোটা উত্তাল হতে দেখিনি আমি। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের গন আদালতের কথা ছোট ছিলাম বলেই হয়তো আমার মনে নেই। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটা এতো তীব্র হওয়ার পেছনেও আছে যৌক্তিক কারন।
এইতো কিছুদিন আগেই আমাদের শুনতে হয়েছে 'এই দেশে যুদ্ধাপরাধী নেই কিংবা এটা ছিল নিছকই গৃহযুদ্ধ'। যারা বলেছেন তারা ধর্মের লেবাস নিয়ে ব্যবসা করেন। এভাবে ধর্ম পুজি করে সেই ৭১ এ আরো বর্বর হয়ে উঠেছিলেন তারা। আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতাই শুধু করেননি, তারা যুদ্ধের ওই সাড়ে নয় মাসে হয়ে গিয়েছিল পশু। জাতীর শ্রেষ্ট সন্তান বুদ্ধিজীবিদের নির্মমভাবে খুন করে দেশকে মেধা শুন্য করে দিয়েছিল আলী আহসান মুজাহিদ, গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী আর সাইদিরা। তাদের সেই ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি এখনো।
আর তাইতো সেইসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটা আরো জোড়ালো হচ্ছে এখন। আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ফিরে আসার জন্যই এই অপরাধের বিচার হওয়া জরুরী। পৃথীবির সব দেশেই এমনটা হয়েছে। তাহলে আমাদের এখানে কেন নয়?
যতোটা মনে হচ্ছে এই সরকার বিচারের ওই পথ মাড়াবে না। বঙ্গভবনে কাল মুজাহিদদের দেখে শংকাটা জোড়ালো হলো আরো। যারা এই দেশটা চায়নি, পতাকাটা চায়নি-তারা যখন সেই দেশটির বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে রাস্ট্রপতির আমন্ত্রন পেয়ে যান, তখন অবাক হওয়ার যথেস্ট কারন থাকে!
কিন্তু সব সম্ভবের এই দেশে অবাক হওয়ার কিছু নেই। খালেদা সরকারের মন্ত্রী পরিষদেও তো ছিলেন দুজন রাজাকার! এটাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। জিয়াউর রহমানই তো পুর্নবাসিত করে গেছেন তাদের। অথচ তিনিই ছিলেন কীনা সেক্টর কমান্ডার!তথাকথিত স্বাধীনতার ঘোষক !!
আমি অবশ্য নিরাশাবাদীদের দলে নেই। পশুদের বিচার হবেই। পৃর্বসুরীদের সেই অসমাপ্ত কাজটা তো শেষ করতেই হবে। সেটা আমি, আমরাই করবো...