Friday, December 21, 2007

বুকিং

চাংক নিয়ে রাখলাম। পড়ে আপডেট হবে: ইদ নিয়ে কপচানী আর কী!

Monday, December 17, 2007

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবেই


ভাগ্যে খুব একটা বিশ্বাস নেই আমার। কিন্তু এটা যখন ভাবতে যাই তখন নিজেকে ভাগ্যবান বলেই মনে হয়। না, হলে আমার বাবাতো কোন মৌলবাদী হতে পারতেন। হতে পারতেন রাজাকার!

হননি বলেই গর্ব করে আমার বাবার কথা, আমার পরিবারের কথা বলতে পারি। আমি মানে তো আমার পরিবার। আমার সংস্কৃতি। যেখানে আমি নতুন সেখানে আমি শুধু আমাকেই প্রতিনিধিত্ব করি না। অনেক কিছুই জড়িয়ে যায় আমার সঙ্গে।
 
গতকাল আরো একটি বিজয় দিবস পালন করলাম। এখন থেকে ৩৬ বছর আগে যখন পাকিস্তান পাল্টে এই দেশটির নাম হয়েছিল বাংলাদেশ- তখন পৃথীবির আলো দেখিনি আমি। আমার জন্ম হয়েছে স্বাধীনতার অনেক পরে। সংগত কারনেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোন স্মৃতিই আমার থাকার কথা নয়। কিন্তু কেন জানি একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি কিংবা আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি- কানে ভেসে আসে, আমি আনমনা হয়ে যাই। চোখে ভেসে উঠে পৃর্বসুরীদের সংগ্রাম, মার্চে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, জয়বাংলা আর একটি দেশের জন্ম যন্ত্রনার সেইসব দৃশ্য। কাল টেলিভিশনে দেখছিলাম- 'অস্তিত্বে বাংলাদেশ' নামের একটি ছবি। বীরশ্রেষ্ট মতিউর রহমানের জীবন নিয়ে তৈরি সেই ছবি দেখতে দেখতেই এক সময় খেয়াল করলাম আমার চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে! নোনা জল চেপে রাখার চেস্টা করিনি!

পরম্পরায় এই আবেগ - অনুভুতি আমার নিজের অজান্তেই চলে এসেছে আমার মধ্যে। আমার বাবাকেও দেখেছি ঠিক এভাবেই ভেবেছেন সবকিছু। আমি ভাগ্যবান!

এবারের বিজয় দিবসটা কেন জানি অন্যরকম মনে হয়েছে আমার কাছে। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার, আল বদরদের বিচারের দাবী জানিয়ে এভাবে এর আগে দেশ এতোটা উত্তাল হতে দেখিনি আমি। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের গন আদালতের কথা ছোট ছিলাম বলেই হয়তো আমার মনে নেই। এবার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটা এতো তীব্র হওয়ার পেছনেও আছে যৌক্তিক কারন।
 
এইতো কিছুদিন আগেই আমাদের শুনতে হয়েছে 'এই দেশে যুদ্ধাপরাধী নেই কিংবা এটা ছিল নিছকই গৃহযুদ্ধ' যারা বলেছেন তারা ধর্মের লেবাস নিয়ে ব্যবসা করেন। এভাবে ধর্ম পুজি করে সেই ৭১ আরো বর্বর হয়ে উঠেছিলেন তারা। আমাদের স্বাধীনতার বিরোধীতাই শুধু করেননি, তারা যুদ্ধের ওই সাড়ে নয় মাসে হয়ে গিয়েছিল পশু। জাতীর শ্রেষ্ট সন্তান বুদ্ধিজীবিদের নির্মমভাবে খুন করে দেশকে মেধা শুন্য করে দিয়েছিল আলী আহসান মুজাহিদ, গোলাম আজম, মতিউর রহমান নিজামী আর সাইদিরা। তাদের সেই ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি এখনো।
 
আর তাইতো সেইসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীটা আরো জোড়ালো হচ্ছে এখন। আইনের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ফিরে আসার জন্যই এই অপরাধের বিচার হওয়া জরুরী। পৃথীবির সব দেশেই এমনটা হয়েছে। তাহলে আমাদের এখানে কেন নয়?

যতোটা মনে হচ্ছে এই সরকার বিচারের ওই পথ মাড়াবে না। বঙ্গভবনে কাল মুজাহিদদের দেখে শংকাটা জোড়ালো হলো আরো। যারা এই দেশটা চায়নি, পতাকাটা চায়নি-তারা যখন সেই দেশটির বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে রাস্ট্রপতির আমন্ত্রন পেয়ে যান, তখন অবাক হওয়ার যথেস্ট কারন থাকে!

কিন্তু সব সম্ভবের এই দেশে অবাক হওয়ার কিছু নেই। খালেদা সরকারের মন্ত্রী পরিষদেও তো ছিলেন দুজন রাজাকার! এটাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। জিয়াউর রহমানই তো পুর্নবাসিত করে গেছেন তাদের। অথচ তিনিই ছিলেন কীনা সেক্টর কমান্ডার!তথাকথিত স্বাধীনতার ঘোষক !!

আমি অবশ্য নিরাশাবাদীদের দলে নেই। পশুদের বিচার হবেই। পৃর্বসুরীদের সেই অসমাপ্ত কাজটা তো শেষ করতেই হবে। সেটা আমি, আমরাই করবো...

হাসির মুখে হাসি নেই...

সেই শুরু থেকেই তিনি অন্যদের চেয়ে একটু অন্যরকম। জন্মের পর পৃথিবীর আলো দেখে কান্না নয়, হাসি ছিল তার মুখে। আর তাই তো বাবা-মা শখ করে নাম রেখেছিলেন হাসি, হাসিনা বেগম হাসি! শত সমস্যাকে একপাশে সরিয়ে হাসিখুশিভাবেই দিন কাটছিল রাজশাহীতে জন্ম নেয়া এই তরুণীর। সামনে ছিল জীবনকে বদলে ফেলার হাতছানি। কিন্তু হুট করেই দুমাস আগে এলোমেলো হয়ে গেছে সবকিছু। হাসির মুখে হাসি নেই! চোখে জল! বিষ্ন্ন হয়ে থাকেন সারাক্ষণ।

আসলে এছাড়া কিইবা করার আছে হাসির? জীবনের সব স্বপ্নই তো বিবর্ণ হয়ে গেছে প্রায়। চেনা জীবনটা এখন অচেনা ঠেকছে জাতীয় ফুটবল দলের এই স্ট্রাইকারের কাছে। একটু ভুল বলা হলো, হাসিনা বেগম হাসি তো এখন আর জাতীয় দলে নেই। ভবিষ্যতে ফিরতে পারবেন কিনা সেটাও ঝুলে আছেযদি ওপর। বাঁ পায়ের হাড়ে টিউমার হয়েছে। এমআরআই করার পর ডাক্তাররা বলে দিয়েছেন সমস্যাটা মামুলি নয়। অসে¿াপচার করালে সমস্যা সারবে কিনা তা নিয়েও শঙ্কা থাকছে! যেমনটা বলছিলেন তিনি, ‘পিজি হাসপাতালের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমাকে সরাসরিই বলেছেন অপারেশন করালে আমি আর মাঠে নামতে পারব না। এমনকি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে গেলেও সমস্যা হবে। হাড়ের মধ্যে টিউমার থাকায় তারা অসে¿াপচারের আগে বেশ চিন্তিত।এর অর্থ তাহলে কি দাঁড়ালো-আর মাঠে ফিরতে পারবেন না তিনি? না তেমনটা নয়। কিছুটা আশার কথাও শুনেছেন ডাক্তারদের কাছ থেকে, ‘তারা বলেছেন ব্যাংকক কিংবা ভারতে গিয়ে চিকিৎসা করালে আমি আবার সুস্থ হয়ে উঠব। আবার নামতে পারব মাঠে।

কিন্তু ডাক্তাররা বললেই তো হবে না, কে তাকে করাবে সেই ব্যয়বহুল চিকিৎসা? সংসারে বাবা নেই। উপার্জনম একমাত্র ভাইটি চার বোন আর মাকে নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খায়। সেখানে তারও তো কিছু করার নেই। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন শুরুতে এগিয়ে এলেও এখন ব্যাপারে অনেকটাই নীরব।

অথচ জাতীয় সম্পদই হয়ে উঠেছিলেন হাসি। জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরুর আগে খেলেছেন হ্যান্ডবল। বিজেএমসির হয়ে তার পারফরমেন্স মন্দ নয়। কিন্তু সবসময়ই মন পড়ে ছিল ফুটবলে। সেই ছোটবেলায় রাজশাহীতে ফুটবল খেলতেন। কাস এইটে পড়ার সময় ছেলেদের সঙ্গে টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েও হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। পরিবার থেকে সহযোগিতা পেয়ে এক সময় তিনি চলে আসেন ঢাকায়। ২০০৪ সালে মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলেছেন ঢাকা জেলার হয়ে। আর প্রথম সেই টুর্নামেন্টে চার ম্যাচ খেলে ম্যাচ সেরা হয়েছেন তিনটিতেই। মহিলা জাতীয় দলের হয়ে তার শুরুটা হয়েছে এর এক বছর পর ২০০৫ সালে, এএফসি কাপে। সেখানে হংকংয়ের বিপে খেলতে গিয়েই প্রথম ব্যথা অনুভব করেন পায়ে। তারপরও গোল পেয়েছেন। ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে খেলে গেছেন এরপর। প্রতিনিধিত্ব করেছেন জাতীয় দলকে। হার মেনে যাওয়া শব্দটা নেই তার অভিধানে।
কিন্তু গত রোজায় ইন্দো-বাংলা গেমসের জন্য অনুশীলন করতে গিয়ে আবারো সেই পুরনো ব্যথায় কাবু হয়ে পড়েন হাসিনা বেগম হাসি। ব্যথা নিয়েই ছাড়েন ক্যাম্প। এরপরই তো হাতে আসে সেই এমআরআই রিপোর্ট।

এখন মাঠে নামার সামর্থ্য নেই তার। কিন্তু মন তো আর মানে না। মনটা পড়ে আছে মাঠে। তাই তো ধানমন্ডি ক্রীড়া কমপ্লেক্সে চলতে থাকা দ্বিতীয় মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্টের ম্যাচ দেখতে প্রায়ই হাজির থাকছেন হাসি। খেলা দেখতে দেখতেই বিষন্ন হয়ে উঠছেন! তিনি মনে করেন দেশকে আরো অনেক কিছুই দেয়ার সামর্থ্য আছে তার, ‘আমার সামনে পুরো ক্যারিয়ারই পড়ে আছে। মহিলা ফুটবলে প্রিয় বাংলাদেশকে আরো অনেক দুর নিয়ে যেতে চাই আমি। যেখানে খেলাধুলার প্রতি মেয়েদের অনাগ্রহ সেখানে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে চাই, চাই আমাকে দেখে দেখে যেন মেয়েরা ফুটবলে আসুক।

এখন তো এসব কিছু শুধুই হাসির স্বপ্ন। তার চলার পথটা অমসৃণ হয়ে উঠেছে! পায়ের এই চিকিৎসার জন্য কে তার দিকে বাড়িয়ে দেবে হাত? কোন স্বহ্দয়বান মানুষ? নাকি তাকে সারিয়ে তোলাটা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব নাকি রাস্ট্রের?

এত কিছু জানেন না হাসি। তার একটাই ইচ্ছা দ্রুত আবার মাঠে ফেরা।মাঠের বাইরে থেকে অস্থির হয়ে উঠেছি। আর ভালো লাগছে না। মন চাইছে এই পা নিয়েই এক্ষুণি মাঠে নেমে পড়ি!’

চোখের জল মুছতে মুছতে বলছিলেন হাসতে ভুলে যাওয়া হাসি!

(
আমাদের ফটো সাংবাদিক আলিম ভাইয়ের অনুরোধে লিখেছিলাম এই লেখাটা।
১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি ছাপা হয়েছে আমাদের পত্রিকায়। এখানে তা তুলে রাখলাম।)

Tuesday, December 11, 2007

আমাদের সৌরভ


মিথ্যে বলবো না, বাঙালি বলেই দাদার প্রতি আমার এই বাড়তি টান। সৌরভ যখন ব্যাট করেন, তখন নিজের এই সাংবাদিক পরিচয়টা ভুলে যাই। হয়ে উঠি একেবারেই নিখাদ সৌরভপ্রেমী! একবার ভাবি আচ্ছা কলকাতার বেহালায় ওই ব্রাক্ষন পরিবারে জন্ম না হয়ে যদি সৌরভের জন্ম ব্যাঙ্গালোর কিংবা মুম্বাইয়ে হতো তাহলে কি এভাবে এতোটা সৌরভপ্রেমী হয়ে উঠতাম?
- না মোটেও না। এখানে শতভাগ পক্ষপাতিত্ব!


দুই বাংলা ভাগ হয়েছে ঠিকই কিন্তু ওপারের সৌরভ ভাল করলে ভাল লাগে! ভাল লাগে কলকাতার একজন প্রীতম, শান কিংবা রানী মুখার্জি বলিউড মাতালেও! মনে হয় ওরা তো আমাদেরই। প্রায়ই উইকিপিডিয়া খুঁজে দেখি কে উঠে আসলো ওপার বাংলা থেকে। উঠতি কোন তারকা হলেই হলো - খুজে দেখতে চাই বাঙালি কিনা। যেমনটা ওইদিন জুবেন গার্গকে নিয়ে হলো। 'ইয়া আলী মাদাত আলী' গেয়ে আলোচনায় চলে আসা এই তরুনও বাঙালি, জানার পর তার গান আরো বেশি শুনছি...

কথা হচ্ছিল সৌরভকে নিয়ে। মানে আমাদের দাদা! কলকাতার ইডেনের পর রাহুল দ্রাবিড়ের ব্যাঙালোরেও হেসেছে ওর ব্যাট! কথাটা খুব সহজ করে বলা হয়ে গেলো। কেননা, যা করেছে তা মোটেও সহজ ছিলনা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬১ রান তুলতেই যখন চার টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হাওয়া, তখন যুবরাজ সিংকে নিয়ে খেললেন সত্যিকারের এক গ্রেট ইনিংস। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো দাদার ব্যাট থেকে এলো ডাবল সেঞ্চুরি! থামলেন ২৩৯ রান করে।

চমকের এখানেই শেষ নয়, দ্বিতীয় ইনিংসেও ঝড় তুলছেন দাদা। আজ ব্যাঙালোর টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে তো দেখলাম ৬৩ রান করে অপরাজিত সৌরভ মাঠ ছাড়ছেন। ৯৯তম টেস্টে আরেকটা সেঞ্চুরি কী এসে যাবে নাকি?

আসলে তো আরো ভালো, না আসলেও সমস্যা নেই। তিন টেস্টের সিরিজে পাচশ' বেশি রান তো এরইমধ্যে করেছেন। হয়েছেন হাজার রান ক্লাবের সদস্যও!
টেস্টে অবশ্য দাদার রান একটু কমই। পাচ কিংবা ছয়নম্বরে ব্যাট করতে হয়েছে বলে সুযোগও কিছুটা কম ছিল ওর। কিন্তু ওয়ানডেতে সৌরভ সর্বকালের সেরাদের একজন। ১১ হাজার রানের ওই মাইলফলক টপকে গেছেন আগেই।
রানের ওইসব হিসেব তো আছেই, সঙ্গে অধিনায়ক সৌরভ ভারতীয় দলকে দিয়েছেন নতুন এক চেহারা! তার সময়েই ডিফেনসিভ ভারত হয়েছে এটাকিং! নাক উচু ব্রিটিশদের লডর্সের বারান্দায় জার্সি খুলে সৌরভের সেই উদ্দাম নৃত্য এখনো তো ভারতীয় ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপন। পরিসংখ্যান এটাই বলছে আমাদের দাদা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বকালের সেরা অধিনায়ক!

অথচ তাকে নিয়েই কিনা গ্রেগ চ্যাপেল, কিরন মোরে, রবি শাস¿ীরা অনেক খেলা খেলেছেন। নোংরা সব কাজকারবার!!! ছুড়ে ফেলেছেন জাতীয় দলের বাইরে। কিন্তু বেঙ্গল টাইগার বলে কথা! সৌরভ ফিরেছেন, ফেরার মতোই!

আমাদের বাঙালিদের ইতিহাস এমনই বর্নাঢ্য। তারপরও কেন জানি আমরা হীনমন্যতায় ভুগি। আমাদের এপারের জেমস বলিউড মাতাচ্ছেন, আশা করছি সামনে হয়তো কোন বাঙলি হলিউডও মাতাবে! একদিন অনেক কিছুই চলে আসবে বাঙালিদের দখলে! বাঙালি সৌরভ ছড়িয়ে যাবে সবখানে। আমরা পারবো...

স্বপ্ন দেখতে বাধা কোথায়? সায়ীদ স্যার তো বলেই দিয়েছেন -মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়!