অনেক ধরেই চলছে
এই বিতর্ক!
আমি নিজেও এ নিয়ে তর্কে
মেতেছি বেশ কয়েকবার।
ভারতীয় ছবি আমদানীর যে
সিদান্ত নিয়েছে সরকার-তা
কি যুক্তিযুক্ত?
আমার প্রাথমিক অনুধাবন যুক্তিযুক্ত। কেননা, এখন সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার সংস্কৃতি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এফডিসি নির্ভর আমাদের চলচিত্রের করুন হাল। কাটপিস নামক মহামারি অবশ্য বন্ধ হয়েছে। কিন্তু শাকিব খান- ডিপজলদের ''ভালবাসা দিবি কিনা বল'' নামের সস্তা কাহিনী নির্ভর ছবি খুব বেশি দর্শকদের টানতে পারছে না।
আমার প্রাথমিক অনুধাবন যুক্তিযুক্ত। কেননা, এখন সিনেমা হলে গিয়ে ছবি দেখার সংস্কৃতি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এফডিসি নির্ভর আমাদের চলচিত্রের করুন হাল। কাটপিস নামক মহামারি অবশ্য বন্ধ হয়েছে। কিন্তু শাকিব খান- ডিপজলদের ''ভালবাসা দিবি কিনা বল'' নামের সস্তা কাহিনী নির্ভর ছবি খুব বেশি দর্শকদের টানতে পারছে না।
এক শাকিব খানের ছবি দেখতে দেখতেও ক্লান্ত দর্শকরা। এ অবস্থায় এমন হয়েছে যে সিনেমা হলগুলো বন্ধ হওয়ার হিড়িক শুরু হয়েছে। সিনেমা হল মালিকরা কতো দিন ক্ষতি পোষাবেন? তাইতো হল ভেঙ্গে নির্মিত হচ্ছে শপিং কমপ্লেক্স। গুলিস্তান সিনেমা হল হতে পারে বড় উদাহরন। আমাদের সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠা এই সিনেমা হল ভেঙ্গে এখন সেখানে শপিং কমপ্লেক্স। হল মালিকরা বলছিলেন এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের ব্যবসা থেকে সরে যেতে হবে।
অনেকে বলছেন কম
বাজেটের ছবি দিয়ে ভারতীয় ছবির সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকা যাবে না। কিন্তু চোখ ফেরান
ষাট ও সত্তর দশকের দিকে। ওই সময়টাতে আমাদের ছবি প্রতিযোগিতা করেছে হলিউড, বলিউড আর
টলিগঞ্জের উত্তম-সুচিত্রা’র সঙ্গে।
হলিউডে ইংরেজি ছবি মুক্তির দিনকয়েক পরই তা ঢাকায় চলে আসতো। সঙ্গে হিন্দি আর ওপার
বাংলার ছবি তো ছিলই। তারপরও দর্শকরা দল বেধে হলে গেছেন রাজ্জাক-কবরীর ছবি দেখতে!
তাহলে এখন কেন
প্রতিযোগিতা সম্ভব নয়?
দেশের সিনেমা শিল্পকে এই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে ভারতীয় ছবি আমদানির সিদান্ত নিয়েছিলো সরকার। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে ঘুম ভাঙ্গলো এফডিসি নির্ভর অভিনেতা-অভিনেত্রী- নির্মাতাদের।
তারা এর প্রতিবাদে শুরু করলেন সভা-সমাবেশ। ঘোষনা করলেন কর্মসুচী। গলা ফাটিয়ে বললেন 'ভারতীয় ছবি এদেশে এলে ঢাকায় ছবির বাজার ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদের শিল্পীরা পথে বসে যাবে। এটা হতে পারে না।'
শুরু হয় আন্দোলন। শেষ পর্যন্ত সরকার সেই সিদান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়।
কিন্তু প্রশ্ন হলো সিনেমা হলই যদি না থাকে তাহলে কি এফডিসি নির্ভর কমার্শিয়াল ছবিগুলো থাকবে? শাকিব খান ছবি প্রতি ৩০ লাখ টাকা করে পাবেন? -উত্তর অবশ্যই ''না'। এ কারনেই সবার আগে বাঁচাতে হবে সিনেমা হল মালিকদের। তারপর অন্য চিন্তা। ঢাকার একটি হল মালিককে বলতে শুনেছি, যে মাসে অন্তত একটি ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শনের অনুমতি চাইছেন তারা। তাতে অন্তত কর্মাশিয়াল ছবি চালিয়ে যে ক্ষতি হয় তা পুষিয়ে নিতে পারবে। প্রস্তাবটা কি যৌক্তিক নয়?
কিন্তু না, এফডিসি
থেকে ষ্পস্ট জানানো
হয়েছে-কোন ভারতীয় ছবি দেখানো
যাবেনা।
এখন আবার তা বাস্তবায়নের পথ তৈরি হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সিনেমা হলে মুক্তি পাবে ভারতীয় ছবি!
ভারতীয় সিনেমা বাংলাদেশে প্রদর্শনে খুব একটা সমস্যা দেখছি না। তবে অবশ্যই এ দেশের কিছু সিনেমা পশ্চিম বাংলায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকটা বিনিময়ের মতো। তাহলে তো কোন সমস্যা নেই!
এই বির্তক নিয়ে দেশের জনপ্রিয়তম সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদ কালের কন্ঠ -এ লিখেছেন অসাধারন এক কলাম। যার প্রতিটি লাইনের সঙ্গে আমি একমত। তাই এখানে তা তুলে রাখলাম-
বহুত দিন হোয়ে
হুমায়ূন আহমেদ
আমার শৈশবের অনেক সুখ-স্মৃতির একটি হচ্ছে মা'র সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়া। বিপুল উত্তেজনা, বিপুল আয়োজন। সিলেট শহরের নিয়ম অনুযায়ী বাসার সামনে রিকশা এসে থামত। শাড়ি দিয়ে সেই রিকশা পেঁচিয়ে ঘেরটোপ করা হতো। মহিলারা ঘেরটোপের ভেতরে। শিশুরা তার বাইরে রিকশার পাটাতনে বসে থাকত। কী আনন্দের দিনই না গিয়েছে। সিনেমা হল পর্যন্ত যাবার আনন্দ, সিনেমা হলের ঘণ্টি শোনার আনন্দ, পর্দায় বড় বড় ছবির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুট-বাদাম খাবার আনন্দ।
এখন আবার তা বাস্তবায়নের পথ তৈরি হয়েছে। ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সিনেমা হলে মুক্তি পাবে ভারতীয় ছবি!
ভারতীয় সিনেমা বাংলাদেশে প্রদর্শনে খুব একটা সমস্যা দেখছি না। তবে অবশ্যই এ দেশের কিছু সিনেমা পশ্চিম বাংলায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনেকটা বিনিময়ের মতো। তাহলে তো কোন সমস্যা নেই!
এই বির্তক নিয়ে দেশের জনপ্রিয়তম সাহিত্যিক ও নির্মাতা হুমায়ুন আহমেদ কালের কন্ঠ -এ লিখেছেন অসাধারন এক কলাম। যার প্রতিটি লাইনের সঙ্গে আমি একমত। তাই এখানে তা তুলে রাখলাম-
বহুত দিন হোয়ে
হুমায়ূন আহমেদ
আমার শৈশবের অনেক সুখ-স্মৃতির একটি হচ্ছে মা'র সঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়া। বিপুল উত্তেজনা, বিপুল আয়োজন। সিলেট শহরের নিয়ম অনুযায়ী বাসার সামনে রিকশা এসে থামত। শাড়ি দিয়ে সেই রিকশা পেঁচিয়ে ঘেরটোপ করা হতো। মহিলারা ঘেরটোপের ভেতরে। শিশুরা তার বাইরে রিকশার পাটাতনে বসে থাকত। কী আনন্দের দিনই না গিয়েছে। সিনেমা হল পর্যন্ত যাবার আনন্দ, সিনেমা হলের ঘণ্টি শোনার আনন্দ, পর্দায় বড় বড় ছবির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুট-বাদাম খাবার আনন্দ।
১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ বেধে গেল।
ফলাফল তেমন কিছু হলো না, তবে আইন পাস হলো এই উপমহাদেশের কোনো ছবি পাকিস্তানে আসবে না। ভারতীয় ছবি বন্ধ হয়ে গেল। সেই সময়কার তরুণ তরুণীরা সুচিত্রা-উত্তমের জন্যে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলতে লাগল। তাদের আশা একসময় সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে। তখন ছবি দেখা যাবে।
তারপর অনেক দিন পার হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, বুড়িগঙ্গার স্বচ্ছ পানি বিষাক্ত হয়ে কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছে, ১৯৬৫ সালের আইন কিন্তু বদলায় নি। এখন আমরা ভারত থেকে বিদ্যুৎ কিনতে পারব কিন্তু তাদের ছবি আনতে পারব না।
কারণটা কী?
পাকিস্তানি ভূত আমরা ঘাড়ে নিয়ে ঘুরছি কেন? উত্তর হচ্ছে দেশের ছবিকে প্রটেকশন দেওয়া। ভারতীয় ছবি এলে আমাদের ছবি বিকশিত হবে না ইত্যাদি। পঁয়তালি্লশ বৎসর আমাদের ছবিকে প্রটেকশন দেওয়ার ফলাফল কী হয়েছে তা সবাই জানেন। এফডিসিতে যেসব রসগোল্লা তৈরি হয়েছে তা আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই চেখে দেখেন নি।
বাংলাদেশী ছবির প্রযোজকরা জানেন, তারা যা তৈরি করবেন দর্শকদের তাই দেখতে হবে। দর্শকদের হাতে কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের ছবির প্রযোজকরা বলেছেন, ভারতীয় ছবি বাংলাদেশে এলে বাংলাদেশের ছবির বারোটা বেজে যাবে। প্রতিযোগিতায় আমরা টিকতে পারব না। আইন করে আমাদের প্রতিযোগিতার বাইরে রাখতে হবে। স্বয়ং বঙ্গবন্ধুও আমাদের প্রটেকশন দিয়েছেন, ইত্যাদি। সারভাইভাল অফ দি ফিটেস্ট বলে যে কথাটি আছে আমাদের দেশে চিত্র নির্মাতা সেটা জানেন না। এই দেশের আইন হলো আনফিটকে সারভাইভ করার সুযোগ দেওয়া। এরচেয়ে হাস্যকর কিছু হতে পারে বলে আমি মনে করি না।
এখন যদি লেখকরা বলেন, আমাদের বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে আমরাও প্রটেকশন চাই। বাইরের কোনো লেখকের বই বাংলাদেশে আসতে পারবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি সেই প্রটেকশন দেবেন? নাকি ছবির প্রটেকশন দিয়ে যাবেন এবং চিত্র নির্মাতারা, "প্রেম না দিলে লাত্থি খাবি?" জাতীয় ছবি বানিয়ে যেতে থাকবেন। এবং একের পর এক আমাদের সিনেমাহলগুলি মার্কেট হতে থাকবে। সাধারণ মানুষের বিনোদন বন্ধ।
কেউ যেন মনে না করেন হিন্দি ছবি দেখার জন্যে আমি ব্যাকুল হয়ে অপেক্ষা করছি। আমি হিন্দি জানি না এবং হিন্দি ছবির ফর্মুলা পছন্দ করি না। একসঙ্গে তিনশ নর্তক-নর্তকীর নৃত্য আমাকে আলোড়িত করে না। তবে আমার জীবনে দেখা প্রথম ছবিটি একটি হিন্দি ছবি নাম 'বহুত দিন হোয়ে'। এই তথ্যটা না জানালে ভুল হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানকে আন্তরিক ধন্যবাদ যে দীর্ঘ পঁয়তালি্লশ বছর পার হলেও তিনি একটি শুভ উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কোন যুক্তিতে একটি শুভ সূচনার পরিসমাপ্তি ঘোষণা করলেন তা আমি জানি না। আমি তাঁকে পুনর্বিবেচনা করতেও বলব না কারণ বলে লাভ নেই। প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সূর্য। তাঁকে ঘিরে থাকবে গ্রহ, উপগ্রহ। তারা প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করেই ঘুরপাক খাবে।প্রধানমন্ত্রী তাদের কথা এবং পরামর্শ শুনবেন। পত্র-পত্রিকায় যারা লিখবেন তারা গ্রহ-উপগ্রহের বাইরে। কে শুনবে তাদের কথা?
আমি একটি ছোট্ট গল্প দিয়ে লেখার ইতি টানছি। এক চলচ্চিত্র উৎসবে হঠাৎ করে সত্যজিৎ রায়ের মহানগর ছবিটি এসেছে। বলাকা সিনেমাহলে পরপর কয়েকটি শো হবে। আমি তখন মুহসীন হলের ছাত্র। টিকিটের জন্যে সারারাত হলের সামনে লাইন দিয়ে বসে থাকলাম। সকাল এগারোটায় কাউন্টারের সামনে এসে জানলাম টিকিট শেষ। কি কষ্টটাই না পেয়েছিলাম। ১৯৬৫ সালের একটি ভুল আইনের কারণে একটা ভালো ছবি দর্শকরা দেখতে পেল না।
আমি নিজে একজন শখের ফিল্ম মেকার। অনেকগুলি ছবি বানিয়েছি, আরও বানাব কিন্তু আমি আমার ছবির জন্যে প্রটেকশন চাইব না। অন্য দেশের ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারলে, টিকব না পারলে নাই।
বাংলাদেশের ছবির জগতে এক ধরনের মনোপলি ব্যবসা চলছে। ইসলাম ধর্মে কিন্তু মনোপলি ব্যবসা নিষিদ্ধ।
যাই হোক আমরা পঁয়তালিলশ বছর পার করেছি। একসময় একশ বছর পার করব। উপমহাদেশের ছবি আমদানি নিষিদ্ধের শতবর্ষ পূর্তি উৎসব হবে। দুর্ভাগ্যবশত প্রাকৃতিক কারণে সেই উৎসবে আমি থাকতে পারব না। একশত বছরের প্রটেকশন পেয়ে আমাদের ছবি কতদূর চলে যাবে তা দেখার একটা শখ অবশ্যি ছিল।
*************************************
(( বিতর্ক বেশ জমে উঠেছে। তাইতো পোস্টের আপডেট দিতে বাধ্য হলাম। ১০ মে প্রথম আলোতে চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা। তারা ভারতীয় ছবি আমদানির বিপক্ষ। এখানে সেই যৌথ কলাম তুলে রাখলাম-))
প্রতিযোগিতা নয়, বিপজ্জনক প্রতিযোগিতা
মোরশেদুল ইসলাম, মোস্তফা সরয়ার
ফারুকী, অমিতাভ রেজা
ভেবেছিলাম , এই যাত্রায় ভারতীয় ছবি আমদানির প্রসঙ্গটা চুকে গেল।
কিন্তু প্রথম আলোসহ বেশ কিছু পত্রিকায় এ প্রসঙ্গে নতুন করে লেখা ছাপা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হলো, আমাদের আসলে কিছু বলার আছে এবং সেটা বলা দরকার।
আমরা তিনজনের একজনও ভারতবিদ্বেষী নই। এমনকি আমরা সরকারবিরোধী কোনো এজেন্ডার ধারক ও বাহকও নই। আমরা তিনজনই ছবি বানাই, বানাতে চাই। বাংলাদেশে নতুন সিনেমার পাল তোলার যে লড়াই চলছে, আমরা তিনজনই তার ক্ষুদ্র শ্রমিক। আমাদের এই লেখায় আমরা প্রথমে বোঝার চেষ্টা করব, যাঁরা ভারতীয় ছবি আমদানির পক্ষে বলছেন, তাঁদের যুক্তিটা কী।
প্রথম যুক্তি, সিনেমা হল মরে যাচ্ছে। সিনেমা হলকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের ছবি দিয়ে সিনেমা হলগুলো দর্শক টানতে পারছে না। অর্থাৎ সিনেমা হলগুলো ভালো চলছে না। সুতরাং ভারতীয় ছবি আনো এবং সিনেমা হল বাঁচাও।
আমাদের বিনীত প্রশ্ন, ‘সিনেমা হল বাঁচাতে হবে কেন?’ উত্তর আসবে, ‘সিনেমার জন্য’। এরপর জিজ্ঞেস করব, ‘কোন সিনেমার জন্য?’ উত্তর কী আসবে? ভারতীয় সিনেমার জন্য? ভারতীয় সিনেমার প্রচার ও প্রসারের জন্য আমাদের সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখার দরকার কী? যদি ভারতীয় ছবির পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্যই সিনেমা হলকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, তাহলে তো সিনেমা হল ভেঙে ফেলে শপিং কমপ্লেক্স করাই ভালো।
দ্বিতীয় যুক্তি, প্রতিযোগিতা। ‘বাংলাদেশের সিনেমাকে ৩৮ বছর সুরক্ষা দিয়ে রাখা হয়েছে। তাতে কী এমন ঘোড়ার ডিমের ছবি উপহার দিয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র? বাংলা সিনেমাকে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে।’ পাঠকমাত্রই নিশ্চিত জানেন, ৩৮ বছর ধরে বাংলা চলচ্চিত্র যে ধারায় চলেছে এবং যেসব অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে, আমরা কেউই তার ভক্ত না। আরও অনেক নবীন-প্রবীণ সহযোদ্ধার সমন্বয়ে আমরাও সেই ধারাকে বদলাতে চাইছি। কিন্তু সেই ধারা বদলানোর রাস্তা যদি হয় হিন্দি সিনেমাকে অবারিত করে দিয়ে বাংলা ছবি চালানোর জন্য হল খুঁজে না পাওয়া, তাহলে আমরা বলব, এটা টিউমার সারাতে গিয়ে মাথা কেটে ফেলার মতো প্রাণঘাতী সমাধান।
৩৮ বছর আমরা বাংলাদেশের সিনেমা থেকে কিছু পাইনি। তাহলে আশা করা যাচ্ছে, হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশে এলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকেরা বদলে যাবেন এবং গিয়ে ভালো ছবি উপহার দেবেন? কিংবা আরও আগে যদি হিন্দি সিনেমাকে অবারিত করে দেওয়া হতো, তাহলে আমাদের পরিচালকেরা সেই কবেই বদলে গিয়ে ভালো ভালো ছবি উপহার দিতেন? প্রিয় ভাই ও বোনেরা, বাংলা সিনেমার মূল সমস্যাটা প্রতিযোগিতার অভাব নয়। বাংলা সিনেমার মূল সমস্যাটা ছিল ‘মেধার অভাব’। কয়েক দশকের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন, ভিডিও মাধ্যমের বৈপ্লবিক বিস্তার, পাইরেসির কল্যাণে পৃথিবীর সব প্রান্তের ছবির সহজপ্রাপ্তি—এই তিনের প্রভাবে আজকে প্রথমবারের মতো একটা প্রজন্মকে দেখা যাচ্ছে যারা সিনেমাটা ঠিকঠাক বোঝে, আধুনিক সিনেমার করণকৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং যারা বাস্তবেই বাংলাদেশের সিনেমার মানচিত্র বদলানোর স্বপ্নে হাতে-কলমে কাজ করছে, তাদের অনেককেই সিনেমা হল আর টেলিভিশনের কল্যাণে আমরা চিনি। তবে বৃহৎ অংশকেই চিনি না, যারা নিজেদের মতো করে প্রস্তুত হচ্ছে। আপাতত তারা ভিডিওতে ছোট ছবি করছে। কিন্তু স্বপ্ন, একদিন বড় পর্দা দখল করার। এরা সংখ্যায় শত-সহস্র। এই যে চারদিকে এত ছেলেমেয়ে ছবি নির্মাতা হতে চায়, এই যে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির উৎসবে এত ছবি জমা পড়া, এই যে এত বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম ক্লাবগুলোর সক্রিয় উপস্থিতি, এই যে ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ক্রমবর্ধিষ্ণু আনাগোনা—এসব কিসের ইঙ্গিত বহন করে? এ সবকিছু একটাই ইঙ্গিত বহন করে যে আমাদের সিনেমা বদলানোর জন্য একটা নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে।
ঠিক এ মুহূর্তে আমরা যদি সিনেমা হলগুলো ভারতীয় ছবির হাতে ছেড়ে দিই, তাহলে এত দিনে তৈরি হওয়া সম্ভাবনার ক্ষেত্রটা ‘অঙ্কুরেই বিনষ্ট’ হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে নতুন ছবি নির্মাতারা যেন তাঁদের ছবি চালানোর মতো হল পান।
একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলা দরকার, আমরা ব্যক্তিগতভাবে প্রতিযোগিতাকে ভয় পাই না। আমরা ভারতীয় টেলিভিশন আর বিজ্ঞাপনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকে আছি। এবং আমরা এও বিশ্বাস করি, ভারতীয় ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার ক্ষমতাও আমাদের আছে। কারণ, বাংলাদেশের জীবনের গভীরে যে সুর আছে, তা একমাত্র আমাদের ছবিতেই বাজবে, কোনো ভারতীয় ছবিতে নয়। ফলে আমাদের ছবি দেখাতে আমরা হলও পাব, দর্শকও পাব। কিন্তু একজন নতুন পরিচালকের কী অবস্থা হবে? তাকে কি হল দেওয়া হবে?
ভারতের অডিও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই আমাদের অডিও ইন্ডাস্ট্রি টিকে আছে। আমাদের বইয়ের বাজারও প্রতিযোগিতা করে টিকে আছে। কেউ কেউ বলছেন, সুতরাং সিনেমাও প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকুক। সিনেমার ব্যাপারটা একটু আলাদা। একটা বইয়ের দোকানে বা সিডির দোকানে আপনি একই সঙ্গে বাংলাদেশি বা ভারতীয় হাজারটা পণ্যই রাখতে পারেন, যার যেটা ভালো লাগবে বেছে নিয়ে যাবে।
কিন্তু একটা ‘বলাকা’ বা ‘রানীমহলে’ আপনি সপ্তাহে একটা ছবিই তুলতে পারবেন। ফলে সেই ‘একটা’ যদি হয় ‘হিন্দি’ একটা, তাহলে আমার দেশের বাংলা ছবিটার জন্য হল পাওয়া যাবে কোথায়? হল পাওয়া গেলেই না প্রতিযোগিতা!! আমাদের দেশের মানুষের দেশপ্রেমের যে অবস্থা, সমমানের স্বদেশি ও বিদেশি—দুটি পণ্য পাশাপাশি রাখলে বিদেশিটাই বেছে নেন, তাতে চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, হলের মালিকেরা হিন্দি ছবিই তুলতে চাইবেন, বাংলাদেশের ছবি নয়। তা ছাড়া ১০০ কোটি টাকার ছবি আর ৫০ কোটি বিপণন বাজেটের ছবির সঙ্গে তো বাংলাদেশের ছবির প্রতিযোগিতা হতে পারে না। এটা অসম প্রতিযোগিতা।
সারা দুনিয়ার সিনেমার দিকে তাকালে দেখা যাবে, সেই দেশগুলো থেকেই ভালো ভালো ছবি আসছে, যে দেশগুলোর বাজার সুরক্ষিত। ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া বা লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে আমরা একের পর এক অসাধারণ সব ছবি পাচ্ছি। কারণ, তাদের ইন্ডাস্ট্রিটা হলিউড এখনো গিলে ফেলতে পারেনি। আর জাপানি বা ইউরোপের অন্যান্য দেশের দিকে তাকান। হলিউডের বিশাল পুঁজি আর বিপণনের তোড়জোড়ে তাদের নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। আমাদের ক্ষেত্রে বলিউডই হলিউডস্বরূপ। তাই ভারতীয় ছবি আমদানির আগে এ সবকিছু মাথায় রাখতে হবে। হিন্দি ছবির আগ্রাসন কেবল বাংলাদেশি ছবির জন্যই বিপজ্জনক, তা নয়। এটা সামগ্রিকভাবেই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
সরকার যদি একান্তই মনে করে, বাংলাদেশের মানুষকে বড়পর্দায় বিদেশের ভালো ছবি দেখাবে, তাহলে বিভাগীয় শহরগুলোতে একটা করে হল নির্দিষ্ট করে দিতে পারে, যেখানে বিদেশি ভালো ছবি দেখানো হবে। তবে সেটা কোনোভাবেই কেবল হিন্দি নয়। লাতিন, ষ্পেনিশ, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইরানি, কোরিয়ান—সব ছবিই আনুপাতিক হারে দেখাতে হবে।
ভেবেছিলাম , এই যাত্রায় ভারতীয় ছবি আমদানির প্রসঙ্গটা চুকে গেল।
কিন্তু প্রথম আলোসহ বেশ কিছু পত্রিকায় এ প্রসঙ্গে নতুন করে লেখা ছাপা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মনে হলো, আমাদের আসলে কিছু বলার আছে এবং সেটা বলা দরকার।
আমরা তিনজনের একজনও ভারতবিদ্বেষী নই। এমনকি আমরা সরকারবিরোধী কোনো এজেন্ডার ধারক ও বাহকও নই। আমরা তিনজনই ছবি বানাই, বানাতে চাই। বাংলাদেশে নতুন সিনেমার পাল তোলার যে লড়াই চলছে, আমরা তিনজনই তার ক্ষুদ্র শ্রমিক। আমাদের এই লেখায় আমরা প্রথমে বোঝার চেষ্টা করব, যাঁরা ভারতীয় ছবি আমদানির পক্ষে বলছেন, তাঁদের যুক্তিটা কী।
প্রথম যুক্তি, সিনেমা হল মরে যাচ্ছে। সিনেমা হলকে বাঁচাতে হবে। বাংলাদেশের ছবি দিয়ে সিনেমা হলগুলো দর্শক টানতে পারছে না। অর্থাৎ সিনেমা হলগুলো ভালো চলছে না। সুতরাং ভারতীয় ছবি আনো এবং সিনেমা হল বাঁচাও।
আমাদের বিনীত প্রশ্ন, ‘সিনেমা হল বাঁচাতে হবে কেন?’ উত্তর আসবে, ‘সিনেমার জন্য’। এরপর জিজ্ঞেস করব, ‘কোন সিনেমার জন্য?’ উত্তর কী আসবে? ভারতীয় সিনেমার জন্য? ভারতীয় সিনেমার প্রচার ও প্রসারের জন্য আমাদের সিনেমা হল বাঁচিয়ে রাখার দরকার কী? যদি ভারতীয় ছবির পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্যই সিনেমা হলকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, তাহলে তো সিনেমা হল ভেঙে ফেলে শপিং কমপ্লেক্স করাই ভালো।
দ্বিতীয় যুক্তি, প্রতিযোগিতা। ‘বাংলাদেশের সিনেমাকে ৩৮ বছর সুরক্ষা দিয়ে রাখা হয়েছে। তাতে কী এমন ঘোড়ার ডিমের ছবি উপহার দিয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র? বাংলা সিনেমাকে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে।’ পাঠকমাত্রই নিশ্চিত জানেন, ৩৮ বছর ধরে বাংলা চলচ্চিত্র যে ধারায় চলেছে এবং যেসব অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে, আমরা কেউই তার ভক্ত না। আরও অনেক নবীন-প্রবীণ সহযোদ্ধার সমন্বয়ে আমরাও সেই ধারাকে বদলাতে চাইছি। কিন্তু সেই ধারা বদলানোর রাস্তা যদি হয় হিন্দি সিনেমাকে অবারিত করে দিয়ে বাংলা ছবি চালানোর জন্য হল খুঁজে না পাওয়া, তাহলে আমরা বলব, এটা টিউমার সারাতে গিয়ে মাথা কেটে ফেলার মতো প্রাণঘাতী সমাধান।
৩৮ বছর আমরা বাংলাদেশের সিনেমা থেকে কিছু পাইনি। তাহলে আশা করা যাচ্ছে, হিন্দি সিনেমা বাংলাদেশে এলে আমাদের ইন্ডাস্ট্রির পরিচালকেরা বদলে যাবেন এবং গিয়ে ভালো ছবি উপহার দেবেন? কিংবা আরও আগে যদি হিন্দি সিনেমাকে অবারিত করে দেওয়া হতো, তাহলে আমাদের পরিচালকেরা সেই কবেই বদলে গিয়ে ভালো ভালো ছবি উপহার দিতেন? প্রিয় ভাই ও বোনেরা, বাংলা সিনেমার মূল সমস্যাটা প্রতিযোগিতার অভাব নয়। বাংলা সিনেমার মূল সমস্যাটা ছিল ‘মেধার অভাব’। কয়েক দশকের চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলন, ভিডিও মাধ্যমের বৈপ্লবিক বিস্তার, পাইরেসির কল্যাণে পৃথিবীর সব প্রান্তের ছবির সহজপ্রাপ্তি—এই তিনের প্রভাবে আজকে প্রথমবারের মতো একটা প্রজন্মকে দেখা যাচ্ছে যারা সিনেমাটা ঠিকঠাক বোঝে, আধুনিক সিনেমার করণকৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং যারা বাস্তবেই বাংলাদেশের সিনেমার মানচিত্র বদলানোর স্বপ্নে হাতে-কলমে কাজ করছে, তাদের অনেককেই সিনেমা হল আর টেলিভিশনের কল্যাণে আমরা চিনি। তবে বৃহৎ অংশকেই চিনি না, যারা নিজেদের মতো করে প্রস্তুত হচ্ছে। আপাতত তারা ভিডিওতে ছোট ছবি করছে। কিন্তু স্বপ্ন, একদিন বড় পর্দা দখল করার। এরা সংখ্যায় শত-সহস্র। এই যে চারদিকে এত ছেলেমেয়ে ছবি নির্মাতা হতে চায়, এই যে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবির উৎসবে এত ছবি জমা পড়া, এই যে এত বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম ক্লাবগুলোর সক্রিয় উপস্থিতি, এই যে ১০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের ক্রমবর্ধিষ্ণু আনাগোনা—এসব কিসের ইঙ্গিত বহন করে? এ সবকিছু একটাই ইঙ্গিত বহন করে যে আমাদের সিনেমা বদলানোর জন্য একটা নতুন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে।
ঠিক এ মুহূর্তে আমরা যদি সিনেমা হলগুলো ভারতীয় ছবির হাতে ছেড়ে দিই, তাহলে এত দিনে তৈরি হওয়া সম্ভাবনার ক্ষেত্রটা ‘অঙ্কুরেই বিনষ্ট’ হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে নতুন ছবি নির্মাতারা যেন তাঁদের ছবি চালানোর মতো হল পান।
একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলা দরকার, আমরা ব্যক্তিগতভাবে প্রতিযোগিতাকে ভয় পাই না। আমরা ভারতীয় টেলিভিশন আর বিজ্ঞাপনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই টিকে আছি। এবং আমরা এও বিশ্বাস করি, ভারতীয় ছবির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার ক্ষমতাও আমাদের আছে। কারণ, বাংলাদেশের জীবনের গভীরে যে সুর আছে, তা একমাত্র আমাদের ছবিতেই বাজবে, কোনো ভারতীয় ছবিতে নয়। ফলে আমাদের ছবি দেখাতে আমরা হলও পাব, দর্শকও পাব। কিন্তু একজন নতুন পরিচালকের কী অবস্থা হবে? তাকে কি হল দেওয়া হবে?
ভারতের অডিও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই আমাদের অডিও ইন্ডাস্ট্রি টিকে আছে। আমাদের বইয়ের বাজারও প্রতিযোগিতা করে টিকে আছে। কেউ কেউ বলছেন, সুতরাং সিনেমাও প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকুক। সিনেমার ব্যাপারটা একটু আলাদা। একটা বইয়ের দোকানে বা সিডির দোকানে আপনি একই সঙ্গে বাংলাদেশি বা ভারতীয় হাজারটা পণ্যই রাখতে পারেন, যার যেটা ভালো লাগবে বেছে নিয়ে যাবে।
কিন্তু একটা ‘বলাকা’ বা ‘রানীমহলে’ আপনি সপ্তাহে একটা ছবিই তুলতে পারবেন। ফলে সেই ‘একটা’ যদি হয় ‘হিন্দি’ একটা, তাহলে আমার দেশের বাংলা ছবিটার জন্য হল পাওয়া যাবে কোথায়? হল পাওয়া গেলেই না প্রতিযোগিতা!! আমাদের দেশের মানুষের দেশপ্রেমের যে অবস্থা, সমমানের স্বদেশি ও বিদেশি—দুটি পণ্য পাশাপাশি রাখলে বিদেশিটাই বেছে নেন, তাতে চোখ বন্ধ করে বলে দেওয়া যায়, হলের মালিকেরা হিন্দি ছবিই তুলতে চাইবেন, বাংলাদেশের ছবি নয়। তা ছাড়া ১০০ কোটি টাকার ছবি আর ৫০ কোটি বিপণন বাজেটের ছবির সঙ্গে তো বাংলাদেশের ছবির প্রতিযোগিতা হতে পারে না। এটা অসম প্রতিযোগিতা।
সারা দুনিয়ার সিনেমার দিকে তাকালে দেখা যাবে, সেই দেশগুলো থেকেই ভালো ভালো ছবি আসছে, যে দেশগুলোর বাজার সুরক্ষিত। ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া বা লাতিন আমেরিকার দেশগুলো থেকে আমরা একের পর এক অসাধারণ সব ছবি পাচ্ছি। কারণ, তাদের ইন্ডাস্ট্রিটা হলিউড এখনো গিলে ফেলতে পারেনি। আর জাপানি বা ইউরোপের অন্যান্য দেশের দিকে তাকান। হলিউডের বিশাল পুঁজি আর বিপণনের তোড়জোড়ে তাদের নিজস্ব ইন্ডাস্ট্রি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। আমাদের ক্ষেত্রে বলিউডই হলিউডস্বরূপ। তাই ভারতীয় ছবি আমদানির আগে এ সবকিছু মাথায় রাখতে হবে। হিন্দি ছবির আগ্রাসন কেবল বাংলাদেশি ছবির জন্যই বিপজ্জনক, তা নয়। এটা সামগ্রিকভাবেই বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির জন্য হুমকিস্বরূপ।
সরকার যদি একান্তই মনে করে, বাংলাদেশের মানুষকে বড়পর্দায় বিদেশের ভালো ছবি দেখাবে, তাহলে বিভাগীয় শহরগুলোতে একটা করে হল নির্দিষ্ট করে দিতে পারে, যেখানে বিদেশি ভালো ছবি দেখানো হবে। তবে সেটা কোনোভাবেই কেবল হিন্দি নয়। লাতিন, ষ্পেনিশ, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, ইরানি, কোরিয়ান—সব ছবিই আনুপাতিক হারে দেখাতে হবে।
মোরশেদুল ইসলাম, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা: চলচ্চিত্র নির্মাতা।