Friday, February 5, 2010
টাকা বাঁচাতে..
আসলে এমনিতেই প্রথম দুটো ম্যাচ হেরে বিপাকে পড়ে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। কাল সকালের ম্যাচটি অনেকটা দায়সারার ব্যাপার হয়ে গিয়েছিল। জিতলেও পদক জেতার লড়াইয়ে ফেরা হতো না। প্রথম ম্যাচে তারা নেপালের কাছে হেরেছিল ০-৮ গোলে। পরের ম্যাচে বাংলাদেশ তাদের হারিয়েছিল ২-০ গোলে। তাই শেষ ম্যাচে জিতলেও এই ইভেন্ট থেকে তাদের পদকের কোনো সম্ভাবনা ছিল না। তাই সময়ের সঙ্গে টাকাকড়ির খরচ বাঁচাতে গতকালই ঢাকা ছেড়েছেন তারা। কাল দলের একজন কর্মকর্তা বলছিলেন, টাকা বাঁচাতেই ওই ম্যাচ না খেলে চলে গেছে তারা। এমনিতে নিয়ম অনুয়াযী ইভেন্ট শেষ হওয়ার একদিন পর থেকেই আয়োজকদের পক্ষ থেকে খরচ বন্ধ করে দেয়া হয়।
তখন থাকতে গেলে নিজেদের খরচেই থাকতে হয়। এ অবস্থায় ফ্লাইট জটিলতার কথা ভেবে সেই বিমানেই দেশে ফিরে গেছে লঙ্কান মহিলা ফুটবল দল।একেবারে সাদা চোখে দেখলে হয়তো বিষয়টাকে খুব স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু অলিম্পিক স্পিরিটের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে শ্রীলঙ্কান দলের এমন চলে যাওয়াটাকে ভালো চোখে দেখছে না দেশটির মিডিয়া। —শুধ কি টাকা বাঁচাতে এমন সিদ্ধান্ত? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে ১১তম এসএ গেমসের শ্রীলঙ্কান দলের অন্যতম সমন্বয়কারী রিসাল লতিফকে। তিনি বলছিলেন, ‘আসলে এছাড়া অন্য কিছু করার ছিল না আমাদের। দেশ থেকে আমাদের অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান হেমসে ফার্নান্ডো স্পষ্ট জানিয়েছেন, যে ম্যাচ খেলেও লাভ নেই তা খেলার দরকার কি। তাছাড়া এই বিমানে না আসলে তো ১০ ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের অপেক্ষা করতে হবে। এতোদিন থেকে বাড়তি অর্থ খরচের কোনো মানে নেই!’ রিসাল লতিফ জানালেন, কলম্বো থেকে ওই বার্তা আসার পর ম্যাচ না খেলেই তাদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।তবে পাকিস্তানকে গতকাল ওয়াকওভার দেয়ার আগে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে নাকি কথা বলেছে শ্রীলঙ্কান দল। পরিস্থিতি পুরোটা জানিয়ে তবেই দেশ ছেড়েছে।
তারা ছাড়াও সেই চার্টার বিমানে ঢাকা ছেড়েছে শ্রীলঙ্কান ওয়েটলিফটিং, সাইক্লিং, ব্যাডমিন্টন এবং কাবাডি দল। এসেছে অ্যাথলেটিক্স, সুইমিং, বক্সিং, কারাতে, রেসলিং এবং টেবিল টেনিস দল। যদিও গতকাল এসএ গেমস টেকনিক্যাল উপকমিটির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু বলছিলেন— ম্যাচ না খেলে শ্রীলঙ্কান মহিলা দলের চলে যাওয়া সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। তবে তিনি এটা নিশ্চিত করেছেন, এ নিয়ে ফুটবল ফেডারেশন শিগগিরই তদন্ত কমিটি গঠন করবে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এফএসি)। এটা পুরোপুরি এএফসির ব্যাপার। এক্ষেত্রে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হতে পারে লঙ্কান মহিলা ফুটবল দলকে। তবে এসবই এখন কেবল প্রাথমিক অনুমান। তদন্ত রিপোর্ট দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু।
বাংলাদেশে যে কোনো ঘটনার তদন্তে কমিটি গঠনটা হয় খুব জোরেশোরে। সেই কমিটি আবার বেশ কিছুদিন হাঁকডাকও করে। কিন্তু এমন সব তদন্তের কয়টির রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেছে, সেই প্রশ্নে কর্তাদের কাছে মিলল মুচকি হাসি!
Thursday, February 4, 2010
‘আফগানিস্তান আর মৃত্যুপুরী নয়, পৃথিবীর সেরা দেশ’
কিছু কমন প্রশ্ন এতো বেশি শুনতে হচ্ছে যে বিরক্তি ধরে গেছে! তাই কথা বলার শুরুতেই মোহাম্মদ মোস্তফা কামান্দ স্পষ্ট জানিয়ে রাখলেন, ‘দয়া করে যুদ্ধ, তালেবান কিংবা ওসামা বিন লাদেন—এসব নিয়ে প্রশ্ন করবেন না। অনেক হয়েছে, এবার আমরা আফগানরা দৃষ্টি ফেরাতে চাই অন্যদিকে।’ আসলেই তো অনেক হয়েছে। সেই ১৭৪৭ সালে আহমেদ শাহ দুরানি দক্ষিণ-মধ্য এশিয়ার দেশটিকে নতুন সাম্রাজ্য ঘোষণার পর থেকেই চলছে অস্থিরতা। এরপর ১৯১৯ সালের অপয়া ১৯ আগস্টে শুরু ‘দ্য গ্রেট গেম’ বলে পরিচিতি পাওয়া তৃতীয় আংলো-আফগানিস্তান যুদ্ধ। ব্রিটিশ-সোভিয়েতের সেই যুদ্ধে গিনিপিক হতে হয়েছে সাধারণ আফগানদের। ’৭০-এর আলোচিত সিভিল ওয়ারের পর এখন চলছে মার্কিন মিত্র শক্তির তালেবান দমনের নামে ‘শান্তি মিশন’। ২০০১ থেকেই যুদ্ধের দাবানলে পুড়ছে দেশ। Tuesday, February 2, 2010
মনোরঞ্জনের দাবি— স্বর্ণপদক তার!
রৌপ্যপদক জেতার পর সেটা গ্রহণ করার জন্য মঞ্চেই আসতে চাননি মনোরঞ্জন রায়। কেননা এভাবে হার মেনে নিতে হবে ভাবেননি বাংলাদেশের এই ভারোত্তোলক। গতকাল পুরুষদের ৭৭ কেজি ভারোত্তোলনে রৌপ্যজয়ী ক্ষুব্ধ মনোরঞ্জন বলছিলেন, ‘আমাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। আসলে হামিদুল নয়, আমিই এই ইভেন্টের স্বর্ণপদক জিততাম। স্বর্ণপদক আমার! কিন্তু আমাকে সেই পদক জেতার সুযোগ দেয়া হয়নি। আমি চেয়েছিলাম ক্লিন অ্যান্ড জার্ক রাউন্ডেও হামিদুলকে টপকে যেতে। কিন্তু আমি বৈষম্যের শিকার। ওরা সুযোগটা আমাকে দিল না। বললো তোমার স্বর্ণপদকের দরকার নেই!’ বাংলাদেশকে প্রথম স্বর্ণ উপহার দিলেন হামিদুল
ভারোত্তোলনের ৭৭ কেজি ইভেন্টে পদক আসছে, এটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। প্রতিযোগী যখন তিনজন, তখন তো প্রতিযোগিতার মঞ্চে পা দেয়ার আগেই পদক নিশ্চিত! সেই তিনজনের মধ্যে আবার দুজনই বাংলাদেশের। অন্যজন আফগানিস্তানের। তাই লড়াই ছিল স্বর্ণের। সেই লড়াইয়ে আফগানিস্তানের মোস্তফা কামান্দ পিছিয়ে পড়ার পর স্বর্ণের লড়াই শুরু হয় দুই বাংলাদেশী ভারোত্তোলকের। স্ন্যাচ এবং ক্লিন জার্কের সেই লড়াই বেশ জমে উঠেছিল স্বদেশি হামিদুল ইসলাম এবং মনোরঞ্জন রায়ের। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল বুঝি ছোট ভাই একরামুলের পথ ধরে রৌপ্য পেতে যাচ্ছেন হামিদুল। কিন্তু ছোট ভাইকে ছাড়িয়ে গেলেন বড় ভাই হামিদুল। দেশসেরা ভারোত্তোলক হামিদুলই জিতলেন স্বর্ণপদক। ১১তম এসএ গেমসে স্বাগতিকদের এটাই প্রথম স্বর্ণ জয়। চতুর্থ দিনে এসে গতকাল গেমস আঙিনায় বাজলো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের উডেনফ্লোর জিমন্যাশিয়ামে উড়লো বাংলাদেশের গর্বের লাল-সবুজ পতাকা। গলায় স্বর্ণপদক ঝুলিয়ে পতাকা হাতে উচ্ছ্বাসে ভাসলেন হামিদুল। এটা বাংলাদেশের জন্য যেমন এবারের গেমসে প্রথম স্বর্ণ তেমনি হামিদুলের এসএ গেমস ক্যারিয়ারেও প্রথম স্বর্ণ। এর আগে ইসলামাবাদ গেমসে রৌপ্য এবং কলম্বোতে পেয়েছেন ব্রোঞ্জ। তখন অবশ্য তার ইভেন্টেও ছিল ভিন্ন। ৬২ কেজি ইভেন্টে লড়েছেন। কিন্তু এবার ওজন বাড়িয়ে ৭৭ কেজিতে নাম লেখান হামিদুল। তাতেই বাজিমাত! এই স্বর্ণপদক জেতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাবেন ৫ লাখ টাকা।গতকাল স্ন্যাচ রাউন্ডে তোলেন হামিদুল তোলেন সর্বোচ্চ ১১৭ কেজি। এখানে অবশ্য এগিয়েছিলেন বাংলাদেশের আরেক প্রতিযোগী মনোরঞ্জন রায়। ১২০ কেজি তুলে হামিদুলের চেয়ে এগিয়ে যান তিনি।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের মোহাম্মদ মোস্তফা কামান্দ পিছিয়ে ছিলেন বেশ খানিকটা। ৯০ কেজি তুলেই হাঁপিয়ে যান যুদ্ধবিধস্ত দেশটির ভারোত্তোলক। ব্রোঞ্জেই সন্তুষ্ট তিনি। ক্লিন ও জার্ক পর্বে এমনিতেই সেরা হামিদুল। মনে হচ্ছিল এখানে তার কাছে পাত্তা পাবেন না অন্য দুই প্রতিযোগী। আফগান তরুণ ১১০ কেজি তুলে থেমে গেলেও বেশ জমে ওঠে হামিদুল এবং মনোরঞ্জনের লড়াই। দুজন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তাতে মনে হচ্ছিল বুঝি সাফ রেকর্ড না আবার হয়ে যায়। কিন্তু এখানে স্ন্যাচ রাউন্ডের ব্যবধানটুকু কমিয়ে আনেন হামিদুল। তিনি তোলেন ১৪০ কেজি। মনোরঞ্জন থামেন ১৩৫-এ। দুই রাউন্ডে ২৫৭ কেজি তুলে দেশকে এবারের গেমসের প্রথম স্বর্ণপদক এনে দেন হামিদুল। রৌপ্য জিতেন মনোরঞ্জন।
যদিও সেনাবাহিনীর এই সদস্য বলছিলেন ২৫৭ কেজি টপকে যাওয়ার সামর্থ্য আছে তার। কিন্তু তাকে সেই চ্যালেঞ্জ কাজে লাগাতে দেয়া হয়নি।প্রতিযোগিতায় ভারত-পাকিস্তানের ভারোত্তোলক ছিলেন না, তাতে স্বর্ণ জেতার কাজটা একটু সহজ হয়েছে হামিদুলের। কিন্তু পদকের আবেদন একটুও ম্লান হয়নি। তাইতো সেনাবাহিনীর সিএমটিটি শাখায় কর্মরত হামিদুল বলছিলেন, ‘আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া! এমন একটি দিনের জন্যই আমি অপেক্ষা করেছি। সেই ১৯৯২ সালে ভারোত্তোলন শুরু করেছিলাম। অবশেষে স্বর্ণপদকের দেখা পেলাম। বলতে দ্বিধা নেই এটাই আমার ক্যারিয়ারের সেরা দিন!’ হামিদুলের এমন সাফল্যে অবশ্য বিস্ময়ের কিছু নেই। সাফে পদক ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে সেই ১৯৯৪ সাল থেকে এখন অবধি তিনিই ভারোত্তোলনের সেরা তারকা! তার হাত দিয়েই এবার স্বর্ণপদক এলো। এমন দিনে কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে উঠলেন হামিদুল। ফিরে গেলেন সেই শৈশবে। জানালেন ফুটবল, ক্রিকেট, হকির মতো এতো খেলা থাকতে কেন ভারোত্তোলনে নাম লেখালেন, ‘আসলে ছোটবেলায় অন্য সবার মতো আমারও প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। কিন্তু আমাদের কুষ্টিয়ার গাংনির মোয়াজ্জেম ভাই আমার চিন্তা বদলে দিলেন। তিনি কিছুটা জোর করেই আমাকে ভর্তি করালেন তার জিমন্যাস্টিকস ক্লাবে। বললেন আমার মধ্যে নাকি ভারোত্তোলকের চেহারা দেখছেন। সেদিন হেসেছিলাম...। আজ মোয়াজ্জেম ভাইয়ের কথা অনেক মনে পড়ছে!’
এমনিতে হামিদুলকে অনুসরণ করে তার অন্য দুই ভাই একরামুল এবং আশরাফুলও ভারোত্তোলনে নাম লিখিয়েছেন। এরই মধ্যে এই গেমসে তার ছোটভাই একরামুল জিতেছেন রৌপ্যপদক। সব মিলিয়ে এখন সুখী মানুষদের একজনই হওয়ার কথা হামিদুলের। কিন্তু সামনের অনিশ্চিত ভবিষ্যত্ এই সুখী সময়েও তাকে চিন্তিত করে তুলছে, ‘দেখুন এখন হয়তো সংবর্ধনা পাব। কিছু টাকাও পাব। কিন্তু সময় ফুরালে সবাই ভুলে যাবে। অতীতে আমি এমনটাই দেখেছি। ভারোত্তোলনকে ক্রীড়াঙ্গনের বেশিরভাগই মানুষই গুরুত্ব দেয় না। সত্ভাইয়ের মতো মনে করে। হয়তো কিছুদিন পরই আমরা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ব।’ এই আশঙ্কা সত্য হলে আসলেই অনিশ্চিত ভবিষ্যত্ অপেক্ষা করছে দেশকে স্বর্ণপদক এনে দেয়া এই ক্রীড়াবিদের জন্য, ‘আমার জীবনে সঞ্চয় বলে কিছু নেই। যা উপার্জন করি তার পুরোটাই এই শরীরের পেছনে ব্যয় করতে হয়। জানেন তো আমাদের অনেক নিয়ম মেনে পুষ্টিকর খাবার খেতে হয়। সেসব জোগাড়ে যা উপার্জন করি তার পুরোটাই ব্যয় হয়ে যায়। প্রতিদিন এখন আমাদের দেয়া হয় ৩৭০ টাকা। আগে পেতাম মাত্র ১২০ টাকা! টাকার অংক দেখেই বুঝে নিন কি পাচ্ছি!’
যারা হামিদুলকে সংবর্ধনা দিয়ে স্বর্ণ জয়ের কৃতিত্বে ভাগ বসানোর অপেক্ষায় তারা কি এই দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাচ্ছেন?
Monday, February 1, 2010
নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়েই খুশি একরামুল
নিজের সীমাবদ্ধতাটুকু ভালো করেই জানেন একরামুল। তাইতো উডেন ফ্লোর জিমন্যাসিয়ামের আট-দশজন দর্শক কিংবা কর্মকর্তাদের মতো আক্ষেপে পোড়েননি তিনি। একটুর জন্য স্বর্ণ পদক হাতছাড়া হয়ে গেলেও হাসতে হাসতেই রৌপ্যজয়ী এই ভারোত্তোলক বললেন, ‘গত কলম্বো এসএ গেমসে ব্রোঞ্জ পেয়েছিলাম, এবার রৌপ্য এলো! আমি খুশি। এভাবে এগিয়ে যেতে পারলেই হবে।’ নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেই খুশি একরামুল। দলীয়করণ, লেজুড়বৃত্তি
গতকালও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ভবনে তৈরি মিডিয়া সেন্টারের সংস্কার কাজ চলছিল। দিনের বেশিরভাগ সময় ধরে চলা ড্রিল মেশিন নিয়ে ঠোকাঠুকির কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে অনেক সাংবাদিককে। এটা তো গেল মিডিয়া সেন্টারের ভেতরের সমস্যা। সেখান থেকে বেরিয়ে যে সাংবাদিকরা অন্য ভেন্যুতে যাবেন তার সুযোগ নেই। শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকার কথা থাকলেও সেটা গতকাল পর্যন্ত কথা হয়েই থেকেছে, বাস্তবতার ছোঁয়া মিলেনি! জুডোর লড়াই দেখতে তাই নিজ উদ্যোগেই সাভার যেতে হলো শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক মহিন্দা বিবেলকে। শ্রীলঙ্কান রেডিও লাখান্দার এই সাংবাদিক বলছিলেন, ‘আমি এর আগে কোনো গেমসেই এমনটা দেখিনি। দেশের বাইরে যখনই গেছি গেমস কাভার করতে সঠিক গাইডলাইন পেয়েছি আয়োজকদের কাছ থেকে। এখানে তেমনটা নেই। আমার তো মনে হয় ইসলামাবাদ ও কলম্বো গেমস এর চেয়ে ভালো ছিল। ওরা অনেক আন্তরিক ছিল। এখানে নিজের উদ্যোগেই ভেন্যুতে যেতে হচ্ছে।’
এখানেই শেষ নয়, ভেন্যুতে গিয়েও খুব একটা সহায়তা মিলছে না!গতকাল প্রশ্নগুলো উঠতেই আয়োজক বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, ‘দেখুন আমি একা কি করব? যখনই যেটা আমার কানে আসে আমি সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। এখন আপনার কাছে শুনলাম সাংবাদিকদের শাটল গাড়ি নেই, সেটাও সমাধান করব।’ আগামীকাল থেকে হবে— এই বলে প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেলেন মহাসচিব।
কিন্তু গতকাল সাংবাদিকদের হাতে আসা বিওএ’র তৈরি গেমস গাইড নিয়ে ঠিকই বিব্রত হলেন কুতুবউদ্দিন। ভুলেভরা ওই গাইড গতকাল তুলে দেয়া হয়েছে গেমস কাভার করা সাংবাদিক, প্রতিযোগী, কর্মকর্তা এবং লিয়াজোঁ অফিসারদের হাতে। তথ্যগত একাধিক ভুলে সয়লাব এই গাইড। যা তৈরি করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এমপি শাহরিয়ার আলম। তাইতো রাজনীতি থেকে দূরে থাকেনি এই সঙ্কলন। প্রথম পৃষ্ঠা উল্টাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। এই গেমসের সঙ্গে এই ছবির রহস্য কি কে জানে! এখানেই শেষ নয়, তুলে ধরা হয়েছে শেখ মুজিবের সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী। গেমস গাইডে বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পরিচয় দিতে গিয়ে তুলে ধরেছেন হাজারো ভুল তথ্য। আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে বানানো হয়েছে দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক। একইভাবে আমার দেশ ক্রীড়া সম্পাদক এম. এম. কায়সারকে দেখানো হয়েছে যে, তিনি কর্মরত জনকণ্ঠ পত্রিকায়। এমন ভুলেভরা গেমস গাইড হাতে নিয়ে বিব্রত বিওএ মহাসচিব কাল বলছিলেন, ‘আমি জানি না ওরা কেন এমন ভুল করল। মহাসচিব হিসেবে এমন ব্যর্থতা আমারই।’ এই বলে এই প্রতিবেদকের সামনেই গেমস গাইডের প্রকাশক শাহরিয়ার আলম এমপির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন কুতুবউদ্দিন। কিন্তু টেলিফোনে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। তবে মহাসচিব জানিয়েছেন ভুলগুলোর জন্য তারা লজ্জিত!
এভাবে অতি উত্সাহীদের এমন কাণ্ড অবশ্য এবারই প্রথম নয়। শোনা গিয়েছিল এসএ গেমসের প্রথম আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি জুড়ে দেয়া হয়েছিল। পরে কয়েকজনের আপত্তির মুখে তা বাতিল হয়। ছাপানো হয় নতুন ডিজাইনের আমন্ত্রণপত্র। আবার শেখ মুজিবের নামে গেমসের নামকরণের কথাও বলেছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু গেমসের নিয়ম অনুযায়ী সেটা করা সম্ভব নয় বলে তা বাতিল হয়ে যায়।তারপরও দক্ষিণ এশিয়ার এই গেমসকে ‘দলীয় রাজনীতি’র বাইরে রাখতে পারছেন না অতি উত্সাহীরা! ১৭টি স্বর্ণপদকের টার্গেট নিয়ে এবারের গেমসে লড়ছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত কোনো স্বর্ণপদক জেতা হয়নি স্বাগতিকদের।
তবে ‘দলীয়করণ, লেজুড়বৃত্তি ও অব্যবস্থনার’— ‘হীরক পদক’(!) এখনই গলায় ঝুলিয়ে ফেলেছেন গেমসের ছোট—বড় কর্তারা!আখের গোছাতে হবে যে!
Saturday, January 30, 2010
সন্ধ্যায় রঙিন স্টেডিয়াম
চোখ ধাঁধানো, জমকালো কিংবা বাংলাদেশে এই প্রথম! এমন কথা গত কয়েকদিন ধরেই বলছিলেন এসএ গেমস উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজকরা। তাদের সেই কথায় বিশ্বাস না রেখেও উপায় ছিল না। টাকা যে কথা বলে! এবারের এসএ গেমস বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে উদ্বোধনী এবং সমাপনী অনুষ্ঠানে। হিসাবটা মনে রাখুন—৪৮ কোটি টাকা! সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ‘অ্যাকুয়েটিক শো’র রঙ্গিন ছটায় যা একটু আলোক ছড়াল। কিন্তু এই মিনিট পনের বর্ণিল আলোকরশ্মির আলোকমালা ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বাকি পর্বগুলোতে নতুনত্ব ছিল কোথায়? Friday, January 29, 2010
আমাদের অলিম্পিক গেমস
কথায় আছে, যায় দিন ভালো যায়! বহুল প্রচলিত এ কথার যৌক্তিকতা বারবার প্রমাণিত হয়েছে আমাদের যাপিত জীবনে। আজ থেকে ঢাকাসহ ৫টি বিভাগীয় শহরে শুরু হচ্ছে এ অঞ্চলের ‘অলিম্পিক গেমস’ বলে পরিচিত এসএ গেমস! অথচ একদিন আগেও খেলার পাতার প্রায় পুরোটাজুড়েই ছিল ক্রিকেট। এর আগে যে দুবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহত্ ক্রীড়া আসর, তখন এমনটা চোখে পড়েনি। ১৯৮৫ ও ১৯৯৩ সালের সে আসর ক্রীড়াপ্রেমীদের মনে উন্মাদনা ছড়িয়েছিল শুরু হওয়ার মাসখানেক আগেই। দিন গণনায় ব্যস্ত থেকেছে মিডিয়াগুলো! সবাই প্রতীক্ষার প্রহর গুনেছে কখন শুরু হবে গেমস! Monday, December 14, 2009
দাদাগিরি আনলিমিটেড
বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমার অধ্যায় শেষ হয়েছে সেই আশির দশকে। মহানায়ক না ফেরার দেশে চলে গেছেন ১৯৮০ সালের অপয়া ২৪ জুলাই! দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও রোমান্টিক ছবির প্রসঙ্গ উঠলে এখনও সেই উত্তম কুমারে ফিরে যায় সবাই। যেমনটা হয় রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। ভালোবাসা কিংবা বিরহ, আমাদের যাপিত জীবনের যে কোনো আবেগ প্রকাশের জন্য জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির ওই মহাপুরুষটির সাহিত্যকর্মই তো বাঙালির অবলম্বন! তার কবিতা, গান, গল্প, উপন্যাস ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায় সবকিছু!রবি ঠাকুরকে ছাপিয়ে যাওয়ার দুঃসাহস এখনও কেউ দেখায়নি ভারতবর্ষে। সেটার বোধকরি সুযোগও নেই! কিন্তু উত্তম কুমারের সেই চিরায়ত রোমান্টিক ইমেজ একজন ঠিকই পেরিয়ে যেতে পারতেন। একজন ঠিকই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারতেন তার ওই আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। তেমনটাই মনে করেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেতা চিন্ময় রায়! তিনি এমন একজন মানুষের নাম বলেছেন যেটি শুনে আবার বিষম খাবেন না। সৌরভ গাঙ্গুলী—ভুল পড়েননি, সৌরভ গাঙ্গুলীই। ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা এই অধিনায়ক যদি সিনেমায় নামতেন, উত্তমের মতোই সফল হতেন কিংবা তার চেয়েও বেশি কিছু!চিন্ময় রায়ের কথায় ‘যদি’র ব্যাপারটা থাকছে বলে ওই প্রসঙ্গ তুলে রাখাই ভালো! কিন্তু মহারাজ সৌরভ যে বাঙালির ‘বোকা বাক্সে’ রীতিমত আলোড়ন তুলেছেন। মাঠে সেই স্টেপ আউট করে ছক্কা মারার মতোই টেলিভিশন অ্যাঙ্করিংয়েও ম্যাজিক। একেবারে শান্ত গলায় ভণিতাবিহীন তার সেই উপস্থাপনায় ‘দাদাগিরি’ নামের অনুষ্ঠানটির জনপ্রিয়তা ওপার বাংলা ছাপিয়ে আছড়ে পড়ে এখানেও। টিআরপি রিপোর্ট বলছে, দুই বাংলা মিলিয়ে এ যাবতকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান এটিই।লর্ডসের ব্যালকনিতে ইংরেজদের সেই নাক উঁচু মানসিকতাকে একহাত দেখিয়ে জার্সি খুলে লাফানো সৌরভকে এবার দেখা গেছে সম্পূর্ণ অন্য ভূমিকায়। সেই অ্যাগ্রেসিভ ব্যাপারটা উধাও। কুইজ শো’র আদলে তৈরি অনুষ্ঠানের প্রতিযোগীদের সঙ্গে মিশে গেলেন ঠিক পাশের বাড়ির ছেলের মতো। সেই তারকা ইমেজের বালাই ছিল না। আর তাই তো বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি সৌমিত্র চট্টোপ্যাধায় থেকে শুরু করে যারাই অতিথি হয়ে এসেছেন সৌরভের, তারাই মুগ্ধ হয়েছেন উপস্থাপনায়। অনেকেই সবুজ মাঠের ২২ গজে ব্যাট হাতে শাসন করা সৌরভের টিভি পর্দায় সাবলীল উপস্থাপনা দেখে অবাক হয়েছেন। তবে সেই অবাক হওয়াদের দলে নেই ইরফান পাঠান। একটি পর্বে তিনিও ছিলেন দাদাগিরি’র অতিথি। ভারতীয় দলের এই অলরাউন্ডার বলছিলেন —‘পেশাদার উপস্থাপকদের চেয়ে দাদার (সৌরভ) এমন ভালো উপস্থাপনা দেখে আমি কিন্তু অবাকঅথচ ভারতীয় একটি টিভি চ্যানেলে দেড় ঘণ্টার সেই কুইজ অনুষ্ঠান শুরুর আগে তেমন প্রস্তুতি ছিল না সৌরভের। অবশ্য তিনি নিজেও ভাবেননি, সপ্তাহের তিন দিন রাতে চলা এই অনুষ্ঠানটি নিয়ে এমন উন্মাদনা হবে। ৬ মাস চলার পর এখন শেষ প্রান্তে তার এই দাদাগিরি। কিন্তু চ্যানেলটির কর্তাব্যক্তিরা কিছুতেই ছাড়ছেন না তাকে। এরই মধ্যে তার হাত দিয়ে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ জমা হয়েছে তাদের অ্যাকাউন্টে। সৌরভের অনুষ্ঠান মানেই স্পন্সরদের লম্বা লাইন। মুম্বাইয়ের পত্রিকা মিড-ডে জানাচ্ছে, দাদাগিরি নাকি শুধু বাংলায় নয়, হিন্দিতেও হবে। ভারতীয় জাতীয় অনুষ্ঠানের মর্যাদা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে এটি।তবে আপাতত লাইট-ক্যামেরা অ্যাকশনের পর্ব শেষ! আগামী সপ্তাহে শেষ হবে দাদাগিরি’র প্রথম পর্ব। সৌরভ ব্যস্ত হয়ে পড়বেন কলকাতা নাইট রাইডার্স নিয়ে। আইপিএল ভাবনা এখন মাথায়। তাই টিভি পর্দার লাজুক আর রোমান্টিক নায়কের চেহারা নিয়ে উপস্থাপনা করা সৌরভকে ভুলে যান। কেননা, এবার যে মাঠের গুগলি অপেক্ষায় আছে তার!অনেকটা রূপকথার জাদুকরের মতো সৌরভ যেটাতেই হাত দিয়েছেন সেটাই সোনা হয়েছে! এবার শেষের শুরুটা ভালো করার মিশন! এরই ফাঁকে চিন্ময় রায়ের প্রস্তাবটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে কিনা কে জানে? মহারাজ চাইলে ঠিকই পারেন!
হচ্ছি না। আমি
আগেও বলেছি, কমেন্ট্রিতে গেলে দাদা সেরাদের একজন হতেন! অসাধারণ ব্যক্তিত্বই এগিয়ে
দেয় সৌরভকে।'
Sunday, October 11, 2009
গাহিয়া সারি গান নৌকা দৌড়াইতাম...

