Tuesday, November 7, 2023

আকুল হয়ে খুঁজে বেড়াই.... কী যেন!

 


দূর থেকে ছবিটা দেখি; যেন সূর্যের আলোয় জীবনানন্দের আঁকা ধূসর বেদনাময় রেখা!


দূর থেকে ছবিটায় দেখি কুয়াশার আড়ালে অস্পষ্ট হয়ে উঠা সেই পথ, সময়, স্মৃতি... মুঠোর ফাঁক গলে হারিয়ে যাওয়া তীব্র জীবন। যে পথ অস্পষ্টতায় মাটিতে নেমে আসা মেঘমালার মতো খুব কাছের মনে হলেও আদতে ধরা যায় না! সে সরণি স্মরণাতীত হয়ে যায় চিরতরে...

ঘুমে-স্বপ্নে বহুবার চিরকালের চেনা এই পথের ধারে সূর্যের এমন কান্না দেখে আকুল হয়ে খুঁজে বেড়াই.... কী যেন! -শৈশব?
সময় যায়, অহেতুক জীবনের বয়স বাড়ে! মেঘাচ্ছন্নতায় এই উজ্বল আলোর পথটাও মলিন হয়ে যায় ক্রমশ, এমন টলটলে জলের মতো স্বচ্ছ স্মৃতিতে সবুজ কচুরিপানার আস্তরণ। বুঝতে পারি কুয়াশাচ্ছন্ন এই আমাকে পুরোপুরি ফিরিয়ে নেবে না আর কোনোদিন।

দূর থেকে ছবিটা ডাকে; মায়ের মতো গভীর এক জলজ ডাক...আমি ধীরে নিঃশব্দে পা ফেলে কাছে যাই; বড় শহরের সমস্ত অবহেলা-অপমান সঙ্গী করে তার চিরচেনা ছায়ায় দাঁড়াই... বুক ভরে নিঃশ্বাস নেই, ছেঁড়া ছেঁড়া ঘুমে; আমার সময়টা থমকে যায় এই শীতল ছায়ায়...এমন নিবিড়তায়!

দূর থেকে ছবিটা দেখি, ধূসর বেদনাময় রেখা প্রখর হয়ে ওঠে! হিসেব মেলে না, রঙ মিলিয়ে যেতে থাকে...কথা খুঁজে পাই না, তাই চুপ হয়ে যাই!

Sunday, January 1, 2023

all your dreams come true

প্রতিটা মাসের মাঝামাঝিতে মনে হয় মাস ফুরাচ্ছে না, দিন গুনতে থাকি...! কিন্তু কী আশ্চর্য, চোখের পলকে ফুরিয়ে যায় একেকটা বছর। বয়স বাড়তে থাকে সবার। ২০২২-এর শুরু এইতো সেদিন, কিন্তু নিমেষে বছরটা হাওয়া!

২০২২ নানা কারণে মনে থাকবে। পরিবারের কয়েকজনের অসুস্থতা ছাড়া বছরটা মনের মতো কেটেছে। জীবনের উত্থান-পতন, ঠেকে শেখা, মানিয়ে নেওয়া এসব গল্প তো ছিলই, সঙ্গে অসাধারণ কিছু মানুষের দেখা পেয়েছি সদ্য শেষ বছরে। অনেক নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়েছি, জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা...
২০২৩, এই বছরটা আরও চ্যালেঞ্জের। টিকে থাকাটা আরও বেশি করে রপ্ত করতে হবে। একটু ধৈর্য আর বিশ্বাস নিয়ে প্রতীক্ষায়... প্রতীক্ষার মূল্য নিশ্চয়ই আসবেই, সবার জীবনে!
বছরটা শুভ হোক প্রত্যেকের!
Happy New Year... I hope all your dreams come true in 2023. Onwards and upwards!

‘এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর...’



 ‘এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর...’

শৈশবের স্মৃতিগুলো কুয়াশার আড়ালে হারিয়ে যাওয়া পথেরই মতো অস্পষ্ট যাচ্ছে, একটু একটু করে! একটা সময় চোখ বন্ধ করে একটু ভাবনার অতলে ডুবলেই নিমিষে খুঁজে পেতাম সেই সব সময়... অফুরন্ত একেকটা আনন্দমাখা দিন।
আমাদের সেই ধুলো উড়া পথ, তার পাশ দিয়ে বয়ে চলা ছোট্ট একটা বিল... প্রাণের সুতার লহরি। বর্ষায় থৈথৈ পানি আর শীতে কচুরিপানায় আড়াল হয়ে থাকতো ছোট-বড় খাঁদ। পানি কমতে থাকলে তারপর একটা সময় পরীক্ষা শেষে স্কুল ছুটি হলেই সেই খাঁদ সেচে চলতো দিনভর মাছ ধরা! আহা, মিষ্টি মধুর স্মৃতির দলের মতো ঝাকে ঝাকে কতো মাছ, পুটি, শিং, মাগুর, কৈ...ছোট্ট একটা জায়গায় কতোশত মাছ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেও মাছ ধরা শেষ করতে পারতাম না কিছুতেই।
আমাদের বাকি বিকেলগুলো চলতো ধুলো উড়িয়ে ফুটবল কিংবা ব্যাট-বলের লড়াইয়ে। শীতের শেষ বিকেলে র‌্যাকেট-ফ্লাওয়ারে ঘাম ঝরানো ছাড়াও অলস কিছুদিন ছিল আমাদের। যে দিনগুলোতে পুরো পশ্চিম পাড়া দল বেঁধে ঘুরে বেড়াতাম আমরা। এখানে সেখানে পেয়াদা বাড়ি, তেতুল তলা, এই বাড়ি সেই বাড়ি...!
গন্ডারদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমাদের পুরোনো সেই স্কুল ঘরটা এখনো চোখে ভাসে। মনে হয় এইতো সেদিন ভাঙ্গা জীর্ণ হয়ে আসা মরিচা পড়া টিনের দোচালা সেই স্কুলের বেঞ্চে বসে আছি। নারান্দীর হেড স্যার কড়া চোখে তাকাচ্ছেন। ব্ল্যাক বোর্ডে নজর নেই বলে বেত নিয়ে মারবেন বলেও মারছেন না। মমতাজ উদ্দিন স্যারের ঘুম ঝরানো কণ্ঠটা ভাসে! স্কুলের ছোট্ট মাঠটার পাশে মেম্বার দাদার দোকান। পুরো গ্রাম জুড়ে তখন একটাই মুদির দোকান, চাল-ডাল, তেল-সাবান, ডাক্তারি পথ্য এমন কী কাফনের কাপড়ও! দুপুরে নিস্তরঙ্গ সময়টাতে দাদা দোকানের মধ্যেই নাক ডেকে ঘুমিয়ে পড়তেন, কেউ অপেক্ষা করতেন কখন ঘুম ভাঙবে। আবার কেউ হয়তো ডেকে তুলে এক পোয়া কেরাসিন তেল নিয়ে যেতেন সন্ধ্যার হারিকেন জ্বালাবেন বলে।
স্কুল ছুটি হলে আমরা এদিক-সেদিক তাকাতাম না। সোজা এক দৌড়ে মাটির রাস্তা ধরে ঘরের পথে। বাড়ি ভর্তি আনন্দ আমাদের, সরকার বাড়ি। মানুষে প্রতিটা ঘর কী যে সরগরম থাকতো। পড়াশোনার সঙ্গে খেলাধূলা.. এটা সেটা পিকনিক, তারমধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতাও থাকতো সব সময়। সবার ঘরে একটা করে পাঠাগার, বই পড়ার প্রতিযোগিতা, পড়াশোনায় এগিয়ে যাওয়ার একটা লড়াই!
এরমধ্যে একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট এলো আমাদের গ্রামে। দিন তারিখ মনে নেই-হতে পারে ৮৮ থেকে ৯০! আসলেই স্মৃতির পথগুলো শীতের কুয়াশার আড়ালে চলে যাচ্ছে বড্ড অস্থির হয়ে দ্রুত! কিন্তু সেই একটা ফুটবল টুর্নামেন্ট ভুলতে পারবো না একেবারে অশীতিপর হয়ে চলে গেলেও।
আমাদের পুরো গ্রাম একদিকে আর সরকার বাড়ি অন্যদিকে। কী যে এক উন্মাদনা! ঠিক তখনই আমাদের সামনে এলেন এক নায়ক। তিনি আমার চোখে এখনও নায়ক। ছোট্ট গড়নের, পেটানো শরীর। আহা, এই মানুষটার পায়েই কী যে যাদু। আমরা তখন ডিয়েগো ম্যারাডোনার মুগ্ধতা সবে হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছি, ঠিক তখনই আমাদের সামনেই আরেক ফুটবল জাদুকর। শুধু কী পা, মাথাতেও সমান দক্ষতা। বুলেট গতির শটের সঙ্গে দারুণ সব হেড! তার সেই ম্যাজিকই আমাদের এক সুতোয় গেঁথে দিল। সেই প্রথম আমাদের সরকার বাড়িটাকে সবাই ধারণ করতে শুরু করলাম...মন প্রাণ দিয়ে! এই বাড়ি কতো প্রতিভার জন্ম দিলেও তিনিই হয়ে থাকলেন প্রথম ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর!
মাঠের সেই মানুষটি আঘাতে লুটিয়ে পড়লে আমরাও ভেঙে পড়ি। তিনি নিশানা খুঁজে পেয়ে হেসে উঠলে আমরাও হাসি। তার একটা বাই-সাইকেল কিক দেখার জন্য সাইড লাইনের বাইরে অধীর হয়ে থাকি মিনিটের পর মিনিট। এখনো কান পাতলে সেই হাসি সেই সময়টা অস্থির সেতারের শব্দের মতো আকুল হয়ে এসে ধরা দেয়। আমি ভুলতে পারি না সেই সব মুখ, সেইসব মানুষ যারা আমার শৈশব রাঙিয়ে তুলেছিলেন। যারা ছিলেন বলেই বারবার ব্যাকুল হয়ে উঠে আমার মন, সব অর্জনের বিনিময়ে হলেও ফিরে যেতে চায় একটি দিনের জন্য সেই সব ধুলো উড়া বিকেলে.. প্রচন্ড বৃষ্টিতে বিলের মাঝখানটায়, জাদুবাস্তবতাবাদ! তেমন একটা অলস দুপুর আর আসে না।
মানুষ কোথায় হারিয়ে যায়? আমাদের শৈশব স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে ভাইজান চলে গেছেন অনেক আগেই। দিন-তারিখ কিচ্ছু মনে রাখতে চাইনি বলে মনেও নেই তিনি হারিয়ে গেছেন নিঃস্ব করে আমাদের। আলম কাকাও হঠাৎ একদিন না বলে আমাদের শৈশব স্মৃতিটুকু সঙ্গে নিয়ে উধাও!
এবার সেই নায়কটিও আর নেই। দর্পন কাকা, সেই আমাদের ছোট্ট বেলার ম্যারাডোনা। তিনি আমাদের-এটা বলতে পারলেই গর্বে উঁচু হয়ে উঠতো মাথা। যিনি ফুটবল পায়ে লিখতেন রূপকথা। বল নিয়ে কারিকুরিতে মনে করিয়ে দিতেন ফুটবল নিছক খেলা নয়, কবিতা, গল্প-উপন্যাস সবই। যার হাত-চোখে এমনই নিশানা যে ছোট্ট একটা এয়ারগানে গাছের পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা শিকারও নিমিষে নেমে আসতো মাটিতে!
আহারে সময়, কিছুতেই লেখার ফ্রেমে আটকাতে পারছি না মূহুর্তগুলো। বিচ্ছিন্ন হয়ে স্মৃতিরা সব চিৎকার করেছে কিন্তু কারও কথা কোন ঘটনাই ঠিকঠাক বলে উঠতে পারছি না। আবেগ থেকে বেরোতে না পারলে আসলে নির্মোহ সেই গল্পেরা ওঠে আসে না, কথায় গল্পে। এলোমেলো অসম্পূর্ণ এইসব কথার মানেটা অন্যদের কাছে হয়তো দুর্বোধ্য-অগভীর। আমাদের কাছেই তা অপরিমেয়!
দর্পন কাকাকে কবর দিয়ে শহরের পথে ফিরতে ফিরতে কথাগুলো ভাবছিলাম। কুয়েতে নিমর্ম প্রবাস জীবন শেষে উনার নিথর দেহটা কফিনে বন্ধী হয়ে এসেছিল একদিন আগেই! বাড়ি ফিরে এবার তিনি চিরদিনের জন্য নিশ্চিন্তে ঘুম দিয়েছেন।
আমি তখন মনোহরদী থেকে ঢাকার পথে। বাইরে অন্ধকার। আমার ভেতরটা গভীর অন্ধকার! একরাশ দীর্ঘশ্বাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মাথায় সব স্মৃতির দল যেন ঝাঁকের ইলিশের মতো ঘুরছে, এই আলো-আঁধারিতে! মানুষ বড্ড অসহায়, কিছুই তার হাতে নেই। না, জানি কিসের আশায়, ক্ষাণিক ভাল থাকার প্রলোভনে অন্তবিহীন পথে শুধু ছুটে চলা, তারপর এভাবেই একদিন ধপ করে নিভে যায় ধুপছায়া!
ভাগ্য সঙ্গে নিয়ে আসা কেউ গোধূলী বেলায় পড়ন্ত দিনের দেখা পায়; কেউ আবার মধ্য দুপুরে মাঝ পথেই পথ হারিয়ে কী জানি কোন অভিমানে হাঁটা দেন অসীমের পানে...! আহারে মানব জনম, ‘এ পৃথিবী একবার পায় তারে, পায় নাকো আর...’

Monday, December 19, 2022

বিজয়



জানতাম ঈশ্বর চান ট্রফিটা আমার হাতেই উঠুক, আমার হাতের ট্রফিটা দেখুন-কী সুন্দর লাগছে!

অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে আমাদের, প্রতীক্ষা শেষে সব কষ্টের অবসান হলো আজ 💚

Monday, January 10, 2022

ডিজিটাল

 যে নগরে ডান আর বাঁহাতের ইশারায় গাড়ি থামে-চলে... সেটা আর যাই হোক ''ডিজিটাল'' নগরী নয়। আসতে-যেতে এনালগ একটা নগরের রাজপথে হারিয়ে যায় কতোশত সেকেন্ড মিনিট ঘণ্টা!

বছরের পর বছর যায়- জীবনে লাল বাতি জ্বলে উঠে প্রতিদিন, কিন্তু রাজপথে সবুজ, হলুদ আর লালের দেখা মেলে না!

Friday, December 3, 2021

চলুন জেগে উঠি

 


-বুনোফুল

ভুল ভাঙিয়ে মিষ্টি হাসি কন্যার,  ‘বাবা, এটা পর্তুলিকা!’

-নাম যাই হোক, বারান্দায় মিষ্টি হেসে ক্ষণিকের এই নতুন অতিথি যেন বলছে, ‘সব যন্ত্রণা ভুলে আমার মতোই হেসে ওঠো। জীবন ছোট, আমার মতোই ছোট। যতোটা সময় বাঁচবো, দেখো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমি। শেখো। অপূর্ণতা ভুলে যাও। হাহাকার সরিয়ে বেঁচে থাকো, বাঁচার মতো!’

চলুন জেগে উঠি নতুন প্রাণে, শুভ সকাল...

Wednesday, August 18, 2021

সাঁঝবাতির রূপকথারা

বিশ্বাস খুঁইয়ে মেয়ের কাছে কি ছোট হয়ে যাবে বাবা? আনন্দ, একাকিত্ব, বিচ্ছিন্নতা, ধুসর, সবুজ কালো রঙ... তারপর কোন এক দিনে বাবার কাছে ফিরে আসে টুকুন! বাবা তখন বসে শ্যাওলাসমাকীর্ণ পুকুরঘাটে। চিত্রকর বাবাকে দেখে চমকে উঠে কন্যা। ভেঙে যাওয়া বাবা কী তবে পালাতে চান?

বিশ্বাস-অবিশ্বাসের আলো-আঁধারে টুকুনকে দেখে তার মনে হয় যেন হাজার হাজার ফিট জলের গভীর থেকে ওঠে আসা। বাবা তার কন্যার গায়ে লেগে থাকা শ্যাওলা, বালি, জলের দাগ মুছতে মুছতে তার ভেতর এমন একটা দীঘির দেখা পান যেখানে ডুব দিলে তাকে আর টুকুন খুঁজেই পাবে না!
কবিতার মতো এক ছবি- সাঁঝবাতির রূপকথারা। দুপুর থেকেই চোখে ভাসছে দৃশ্যের পর দৃশ্য। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চলেই গেলেন। এমন এক দীঘিতে ডুব দিলেন যে হারানো রূপকথারা টুকুনের জীবনে ফিরলেও তাকে আর খুঁজেই পাওয়া যাবে না, পুরনো শহরে কিংবা নতুন কোন চ্যালেঞ্জে!


বেশ কয়েকদিন ধরেই শঙ্কায় দিন কাটছিল সবার। অনেকদিন ধরে চাইছিলাম- এমন কিছু না হোক। মিরাকলের কাছেই সমর্পণ ছিল।
তারপরও যখন হয়নি.. যখন তিনি, একদম তারই মতো করে বলে গেলেন, ''আজ তবে আসি'', তখন বরং চলুন এই চলে যাওয়া সেলিব্রেট করি। অনেক দিয়েছেন আপনি। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আজ ১৫ নভেম্বর অমরত্ব পেয়ে গেলেন, সৌমিত্র দা।
আমি আসলে আপনার কাজকে আলাদা করতে পারিনা। তরুণ সৌমিত্র, যুবক সৌমিত্র কিংবা শেষ বয়সের সৌমিত্র। অতিনাটকীয়তা রেখে গলার স্বর, কথা বলার ভঙ্গি, গভীর নির্মোহ দৃষ্টি, সব সময়ই টেনেছে! টানবে আজীবন!
চলে গেলেন, এবার চিরদিনের জন্য বেঁচে থাকুন প্রতিটি বাঙালির ঘরে... অপু, অমল, ময়ূরবাহন, ক্ষিদ্দা, শ্যাম, নরসিংহ, গঙ্গাচরণ, সন্দীপ, অঘোর, সুবীর কিংবা চিরচেনা ফেলুদা হয়েই।

https://www.facebook.com/aapon/videos/10158052443426775

পথের পাঁচালী

''নাছোড়বান্দা স্মৃতি সাদা আর কালো জুড়ে অপুর পায়ের ছাপ ডুবছে বাঁশির সুরে..'' 'পাশ দিয়ে পথ গেছে দূরের থেকেও দূরে'; এই আমাদের গ্রাম। আমার হৃদয়ের খুব কাছের কাঁচা মাটির ধুলো ওড়া পথ। ধানের জমি, ছোট্ট আম বাগানের পাশ দিয়ে একেবেঁকে যাওয়া হারানো শৈশব। সকাল, মধ্য দুপুর কিংবা শেষ বিকেলের আলোয় এই পথ ধরে কতোবার যে হারিয়ে গেছি, হিসেব নেই! কাঁচা আমের আটি দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে লিখেছি, ''আমিই সেই অপু।'' পথের পাঁচালী' তো আমারই গল্প। 
সারি সারি কাশফুল পেরিয়ে তাইতো একদিন আমিও ছুটে গেছি, সেই ধোয়া উড়িয়ে যাওয়া চলন্ত ট্রেন দেখবো বলে। লেবুর পাতা করমচা! আহ, আমার সেই মুঠোর ফাঁক গলে হারিয়ে যাওয়া শৈশব। 'সময়ের রেলগাড়ি', সব এলোমেলো করে দিয়ে গেল। কতো আকুতি, শত অনুনয়-ফিরেও আসে না আর! 
 সেই সিথি কাটা চুলে স্মৃতির পথ ধরে হেটে চলা 'অপু' হয়ে উঠা হয় না আমার, হবেও না আর এই জনমে...

অনুধাবন

টাকার চেয়ে মূল্যবান অনেক কিছুই আছে পৃথিবীতে। কিন্তু সেই ''অনেক কিছু'' পেতে হলেও টাকার দরকার!

হয়ে উঠুন বর্তমানের আপনি

একজন মানুষের জানা দরকার জীবনের শেষ ধাপ কোথায়? আমরা যদি একটা ধাপে প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সময় থাকি তাহলে আমরা অন্য ধাপগুলোর আনন্দ আর উদ্দেশ্য থেকে বঞ্চিত হবো। জীবনের এইসব ধাপগুলো পূর্ণ করা, দরজা বন্ধ করা, অধ্যায়ের ইতি টানা, আসলে যাই বলা হোক না কেন আসল কথা হলো যে অতীত, যে সময় ফুরিয়ে গেছে তাকে পেছনে ফেলে আসা। সম্পর্ক ভেঙে গেছে? চাকরি চলে গেছে? বাবা-মার বাসা থেকে বের হয়ে আসতে হয়েছে? কিংবা অনেক অনেকদিনের গড়া বন্ধুত্বা এক মুহূর্তে শেষ হয়ে গেছে? কেন চাকরি গেল, কেন সম্পর্ক ভাঙলো, কেন সব শেষ? ‘কেন’-র ভুবনে ডুব দিয়ে অনেক সময় পার করা যায়। অনেক অনেক মুহূর্ত চিন্তা করে কাটিয়ে দেয়া যায়। জীবনের এইসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো কেন হঠাৎ আচমকা ধুলোর সঙ্গে মিশে গেল সেই কারণ খুঁজে বের করার আগে আপনি হয়তো একটুও এগোতো চাইবেন না, পা চলতে চাইবে না! ‘সব শেষ’ নামের হাহাকার সেই ‘কেন’-র উত্তর খুঁজতে আপনাকে অহর্নিশ পাগল করে দেবে। কিন্তু এমন আচরণ আপনাকে বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ভাই-বোন আর সন্তানের ওপর চাপ তৈরি করবে। সেই চাপ অসহনীয় হয়েও যেতে পারে। আসলে সবাই তাদের জীবনের ধাপগুলো শেষ করছে, করেছে। পাতা উল্টাচ্ছে, জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে একটু একটু করে। আর সেই তারাই আপনাকে এক জায়গায়, একই বৃন্তে আর একটাই প্রশ্নের সামনে আটকে থাকতে দেখে মন খারাপ করবে। সত্যি বলতে কী, যা চলে যায় তাকে চলে যেতে দেওয়াই উচিত। সেটা করতে গিয়ে যত তীব্র বেদনাই হোক অতীত সেই সম্পর্ক, স্মৃতির স্যুভেনিগুলো ভেঙে দিন, সরিয়ে ফেলুন, প্রয়োজনে দান করে দিন কোনো এক অনাথ আশ্রমে, বিক্রি করে দিন, স্রেফ ভুলে যান। এই আলো-বাতাস, দৃশ্যমান পৃথিবীর সবকিছুই হলো অদৃশ্য পৃথিবীর ছায়া। আমাদের যাপিত জীবনে কিছু স্মৃতি ফেলে দেয়ার অর্থ একটাই-নতুন কিছু স্মৃতির জন্য তৈরি আপনার মন, আপনি নিজে। যে চলে গেছে, চলে যেতে চায় তাকে ছেড়ে দিন। সেই সব মানুষ আর তাদের থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। আমার মনে হয় জীবনটা স্রেফ তাস খেলার মতো। আসলে কার্ডগুলো আমরা কেউ চিনে রাখি না। তাই কখনও আমরা জিতে যাই, আবার কখনও বা হেরে যাই। কোনো প্রতিদান আশা করবেন না, না কোনো প্রতিদানই নয়। বাহ-বা-র আশাও করবেন না। আপনার মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে কী হচ্ছে না, ভালোবাসা পেলেন কী পেলেন না ভাবার দরকার নেই। কিছু একটা হারাতে আপনি কতটা কষ্টে নীল হয়েছেন, কতটা ভুগেছেন? -অনুভূতির জানালা খুলে, আবেগের টেলিভিশন খুলে সেই অনুষ্ঠান বারবার দেখা বন্ধ করুন। এসব কিছু আপনার মনকে বরং বিষন্ন করে দেবে। একটু একটু করে নিজের অজান্তেই আরও বেশি একা হয়ে উঠবেন আপনি। এছাড়া আর কিছুই হবে না, হয়ও নি কোনোদিন! ঠিক না থাকা কাজের প্রতিশ্রুতি, ভেঙে যাওয়া প্রেম এসব মেনে না নেয়ার মতো বোকামি আর ক্ষতিকর কিছুই হতে পারে না। জীবনের নতুন এক অধ্যায় শুরুর আগে আগের অধ্যায়টিকে শেষ করতেই হবে। হাসিমুখে নিজেকে বলুন-যা চলে গেছে তা একেবারেই গেছে, ফিরে আর আসবে না কখনও। যে জিনিস কিংবা যে মানুষটাকে ছাড়া একসময় বেঁচেছিলেন সেই সময়ের কথা ভাবুন। সবকিছুই প্রতিস্থাপনীয়। অভ্যেস আর প্রয়োজন এক ব্যাপার নয়। কথাগুলো অবশ্য বলে ফেলা গেল অনায়াসে মেনে নেয়া কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। একটু একটু করে প্রতিদিন জীবনের চক্রটা পূরণ করুন। গর্ব, অপ্রাপ্তি, অক্ষমতা আর অহংবোধের জন্য নয়, আপনার জীবনের সঙ্গে ব্যাপারগুলো যায় না সেই কারণে কাজগুলো করুন। আর দরজা বন্ধ করে দিন, প্লেয়ারের সিডি বদলান, ঘরটা পরিস্কার করুন, ধুলো-বালি ঝেড়ে ফেলার এইতো সময়। অতীতের ‘আমার আমি’র মধ্যে আটকে না থেকে বরং হয়ে উঠুন ‘বর্তমানের আপনি...’ ................................................................ -পাওলো কোয়েলহোর ব্লগে পাওয়া লেখাটি স্বাধীনভাবে অনুবাদ করেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। অনেক প্রিয় এই লেখাটা তুলে রাখলাম টাইমলাইনে।